শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২১
চলতি মৌসুমে বড় ধরনের প্রাকৃতি দুর্যোগ ঝড়ঝাপ্টা হয়নি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়। ফলে একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এবার সজিনার বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষকের উৎপাদিত সজিনায় এখন গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারগুলো ভরপুর। রাস্তার ধার, জমির আইল, ফসলের মাঠ ও বাড়ির আঙিনায় কম খরচে উৎপাদন ও পরিচর্যা কম হয় বলেই কৃষকরা সজিনা চাষে আগ্রহী।
উৎপাদিত সজিনা উপজেলা ও জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় সজিনাতে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা।
দুর্গাপুর সদর বাজারে দেখা গেছে, প্রতিদিন পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কৃষকদের কাছ থেকে সজিনা কিনছেন। দুপুর নাগাদ ক্রয়কৃত সজিনা ব্যবসায়ীরা আঁটি বেধে ট্রাকে তুলছেন। এসব সজিনা ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছর শুরুতে উপজেলার প্রায় হাটে-বাজারে ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে সজিনা বিক্রি হয়েছে।
এখন ভরা মৌসুম। উৎপাদন বেশি হওয়ায় প্রাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। রাজশাহীর অঞ্চলের সজিনার স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর। এ জন্য সারাদেশে এ অঞ্চলের সজিনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হাট-বাজারে ব্যবসায়ীদের চাহিদা বেশি হওয়ায় গ্রাম পর্যায়ে সজিনার ব্যাপকহারে চাষ হয়ে থাকে। উপজেলায় জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি পতিত জমিতে সজিনার চাষ বেশি হয়।
ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী সোলেমান আলী বলেন ৫-৭ বছর থেকে তিনি এ অঞ্চলের সজিনা কিনে ঢাকায় সরবরাহ করেন। শুধু দুর্গাপুর উপজেলার না, রাজশাহীর চারটি উপজেলা থেকে প্রতিবছর কৃষকদের থেকে সজিনা কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। তিনি বলেন, এ বছর রমজান মাসে সজিনার দাম ভাল ছিল। এখন ভরা মৌসুম উৎপাদন বেশি হচ্ছে। এ কারণে একটু দাম কমেছে। গত বছরের চেয়ে এছর বাজারে একটু সজিনা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলেন, ঝড়ঝাপ্টা হলে সজিনার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাজারগুলোতে সজিনার সঙ্কট দেখা দেয়। এ বছর ঝড় না হওয়ায় উৎপাদন বেশি হয়েছে।
উপজেলার কুহাড় গ্রামের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি বিভিন্ন বাজার থেকে সজিনা কিনে থাকেন। ক্রয়কৃত সজিনা ঢাকার কাওরান বাজারে সরবরাহ করেন। কাওরান বাজারে তার ছোটভাই কাঁচা মালের ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের সজিনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এবার পর্যাপ্ত সজিনা পাওয়া যাচ্ছে। দামও ভাল পাচ্ছে কৃষকরা।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার শালঘরিয়া গ্রামের গৃহিণী লাইলি বেগম বলেন, অনাবাদি জায়গা থেকে রমজান মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি ৭ হাজার টাকার সজিনা বিক্রি করছেন। বিক্রি ছাড়াও নিজের পরিবারসহ আত্নীয় স্বজনকেও সজিনা দিয়েছেন। নিজের জমির সীমানা রাস্তার ধারে তিনি প্রায় ১৮টি সজিনার গাছ লাগিয়েছেন।
এসব গাছ থেকে এক মাসধরে প্রতিহাট বারেই সজিনা বিক্রি করছেন। শুরুতেই দাম ভাল ছিল। এখন বাজারে পর্যাপ্ত সজিনা পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে একটু দাম কমেছে। তিনি আশা করেন, এ বছর রাস্তার ধারে তার অনাবাদি জমি থেকে ১০থেকে ১২ হাজার সজিনা বিক্রি হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, প্রাকৃতি দুর্যোগ না হলে এ উপজেলা প্রচুর পরিমাণ সজিনা পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাড়ির গৃহিণীরা বাড়ির আশেপাশে বেশি সজিনা গাছ লাগিয়ে থাকেন। জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি জমিতে সজিনার চাষ বেশি দেখা যায়। বেশির ভাগ কৃষকরাই বাড়িতে খাওয়া উদ্দেশ্যে লাগিয়ে থাকেন। যখন প্রচুর উৎপাদন হয়। তখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। ফলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হোন।
তিনি বলেন, বাড়ির আঙিনা, জমির আইল, পতিত জমিতে বেশি বেশি সজিনা চাষে বাড়ির গৃহিণীদের উৎসাহ যোগাতে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ প্রদানে নিদের্শ দেওয়া রয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবা খাতুন বলেন, সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ আখ্যায়িত করেছে বিজ্ঞানীরা। এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায়। বাড়ির আঙিনাসহ পতিত জমিতে আবাদ করতে পারে নারীরাও। সজিনা চাষে যেমন একদিকে পরিবারের পুষ্টি ও অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবানও হওয়া যায়।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়