বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৪ ১৪৩১
|| ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
মুনীর জামান
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০১৯
মুনীর জামান।
দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ থাকার পর আমাদের এক প্রতিবেশীর হঠাৎ আবির্ভাব! উনি স্বপ্নে প্রাপ্ত নানা কেরামতির ফিরিস্তি নিয়া দাড়ি টাড়ি রাইখা পুরা দরবেশ এর বেশে রাতারাতি বিলাসবহুল দরবার খুইলা বসলেন। চারদিকে হৈই-হৈই রব পইরা গেলো।
ক্যান্সার, বহুমূত্র, বিকলাঙ্গতা, বিয়া-সাদি, প্রেম-ভালোবাসা, বিদেশ যাত্রা থেকে শুরু কইরা হেন সমস্যা নাই যা তার ফু কিংবা পানি পড়ায় সমাধান হয়না। পানি পড়া প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা দিন দিন এতই বাড়তে থাকলো যে উনি প্রতিদিন টিউবওয়েলে একবার ফু দেন আর মানুষ লাইন ধইরা ওই টিউবওয়েলের পানি নেয়।
ফু-প্রত্যাশী মানুষের জন্য উনি দৈনিক তিনবার মাইকে ফু দেন। তবে মহিলাদের জন্য সরাসরি দেখা করার সুবন্দ্যোবস্ত ছিলো। নির্ধারিত হাদিয়া প্রদান করলে কেবল এই সেবা পাওয়া যেত। এসএসসি পরীক্ষার আগে আমি কলমে সরাসরি ফু দেওয়াইছিলাম এবং আমিই একমাত্র দুর্ভাগা বান্দা যে ওনার ফুতে উপকার না পাইয়া দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন কলম বদলাইয়া পরীক্ষা দিতে বাধ্য হইছিলাম।
খান জাহান আলীর মাজারে গেছিলাম, চারদিক দিয়া ঘিরে ধরলেন খাদেমরা। টাকার বিনিময়ে দোয়া চাইয়া দিবেন। জিগাইলাম দোয়া কার কাছে চাইবেন? কয় "বাবার কাছে"। আমি কইলাম উনি তো মইরা গেছেন, ওনার কিছু দেওনের ক্ষমতা আছে? আসেন ওনার জন্য দোয়া করি। মাইর খাওনের দশা হইছিলো। কোনমতে রক্ষা পাইয়া বের হয়ে যাওয়ার পথে ঘিরে ধরলো আরেক দল। কুমিরের খাবারের জন্য ট্যাকা দেন। বললাম মুরগী কিননা পুকুরে ফালাই। হবেনা। মুরগির দাম দিতে হবে। দিলাম। বাধ্য হইলাম। না হয় আমারেই কুমিরের খাওন বানাইয়া দিত।
মরহুম খান জাহান আলীর বংশধর কয়েকশত পরিবার কোনা ধরনের কাজকর্ম ,ব্যাবসা-বাণিজ্য, পড়াশোনা, ধর্মকর্মের ধারে কাছেও নাই।
"মিলাদ" আর মুরগী বেইচ্চা খায় আর বংশ বৃদ্ধি করে। চলনবিলের একেবারে শেষ প্রান্তে দ্বীপের মধ্যে তিষি/ঘাসি বাবার মাজার। ট্রলার ভাড়া কইরা হাজার হাজার মানুষ আসে প্রতিদিন ,অধিকাংশই হিন্দু মহিলা। টাকা দিলেই মনের সব আশা পূর্ণ হবার নিশ্চয়তা আছে। এই মাজারের একটা বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হইলো এখানে একেবারে প্রকাশ্যে সুলভমূল্যে ভালোমানের দেশী গাজা পাওয়া যায় এবং বইসা খাওয়ার নিরাপদ ব্যবস্থা আছে।
একমাত্র আমাদের ধর্মেই এবং সম্ভবত শুধুমাত্র এইদেশে মানুষের মৃত্যুর পর মিলাদের নামে ব্যাপক খানাদানার আয়োজন হয়। একধরনের উৎসবমূখর পরিবেশ তৈরী হয়।
ভিআইপি মেহমান আসেন, হুজুর আসেন, বিরাট বক্তৃতা দেন, সবাই মিললা গানের সুরে উর্দু/হিন্দিতে কি যেন পড়েন। খাওয়া দাওয়ার পরে হজুররে প্রমান সাইজের খাম ধরাইয়া দিতে হয়। এক্ট্রা খাবার প্যাকেটও দিতে হয়। খামের সাইজের উপর নাকি দোয়ার সাইজ নির্ধারিত হয়।
কয়দিন আগে একটা সাইনবোর্ড দেখলাম লেখা আছে "এখানে স্বল্পমূল্যে দোয়া ও মিলাদ পড়ানো হয়"।
দেখার যে কত কিছু বাকী এখনও! ভারতের বিখ্যাত মাজার আজমীর শরীফের বাংলাদেশে এজেন্ট আছে। আপনি এক লাখ বিশ হাজার টাকা দিলে ওইখানে আপনার নামে এক ড্যাগ রান্না হবে। জিগাইছিলাম তাতে আমার কি লাভ? আপনার মনোবাসনা পুর্ন করার জন্য দোয়া করা হইবে। কার কাছে? বললো আল্লাহর কাছে। বললাম, আমার আল্লাহর কাছে আমি নিজেই সব চাইতে পারি, বলতে পারি। নিজেরটা নিজে চাইলে কোন সমস্যা আছে? আমি নাকি কয়েক লাইন বেশী বুঝি।
"এইদেশে একদল ধর্মান্ধ মাজারে মোমবাতি জ্বালাইয়া প্রার্থনা করে, আরেকদল প্রগতিশীল মঙ্গল প্রদীপ জ্বালাইয়া প্রার্থনা করে"। আমি যে কোন দলেই নাই, আমার কি হবে? রোজার দিনে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ ,আমার ধর্মকে তুমি ব্যবসা মুক্ত রাইখো রাব্বুল আল আমিন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়