বৃহস্পতিবার ৩০ মার্চ ২০২৩ ||
চৈত্র ১৫ ১৪২৯
|| ০৮ রমজান ১৪৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৩
ভালো ফলন ও জমির গুণাগুণ ঠিক রাখতে সার ব্যবহার করতে হয়। কৃষি বিভাগ চেষ্টা করলেও ভার্মি ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল উদ্যোক্তা সেভাবে গড়ে উঠছে না। রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কনোপাড়া গ্রামে দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র।
নিজ গ্রামে আক্কাস আলি গড়ে তুলেছেন সার কারখানা। সেই কারখানায় কেঁচোর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে জৈব সার। আক্কাস আলির স্বপ্ন এখন আরও বড়। বর্তমানে এই সার কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে ৫০ কেজি কেঁচো। চারজন শ্রমিক সেখানে কাজ করেন। এখন এই কারখানা থেকে গড়ে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ কেজি সার উৎপাদন হচ্ছে। সার উৎপাদনের পাশাপাশি কারখানার পরিসর বাড়াতে কেঁচো উৎপাদনও শুরু করেছেন আক্কাস। ২০২৫ সালের মধ্যে তিনি কারখানায় চার হাজার কেজি কেঁচো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন।
আক্কাস আলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এক আত্মীয়ের পরামর্শে ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ২০২১ সালের মে মাসে ৫০০ গ্রাম কেঁচো দিয়ে সার তৈরির কাজ শুরু করেন আক্কাস আলি।
দুই বছরের মধ্যেই তিনি কেঁচো বাড়ানোর কলা-কৌশল আয়ত্ত করেছেন বেশ ভালোভাবে। কেঁচো থেকে উৎপাদিত সারকে ভার্মি কম্পোস্ট বলে। এই ভার্মি কম্পোস্ট সার কারখানার পাশাপাশি তিনি ট্রাইকো কম্পোষ্ট কারখানাও সংযুক্ত করেছেন। দুই কারখানায় ব্যবহার করা গোবর কিনছেন দুটি গরুর খামার থেকে। ভার্মি কম্পোস্ট কারখানায় শুধু গোবর ব্যবহার করা হয়। তবে ট্রাইকো কম্পোস্ট কারখানায় ১১ উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। সেগুলো হলো– নিমপাতা, কচুরিপানা, মুরগির বিষ্ঠা, চা পাতা, ছাই, ভুট্টা ভাঙা, ডিমের খোসা, কাঁঠের গুঁড়া, চিটা গুড় ও ট্রাইকো ডার্মা ব্যাকটেরিয়া।
ভার্মি কম্পোস্ট কারখানার জন্য দুটো দু’চালা টিনের শেড করেছেন আক্কাস। শেডের নিচে পাকা করে ত্রিপল বিছানো রয়েছে। তার ওপর মোটা স্তর করে গোবর বিছানো। গোবরের মধ্যে ২৪ থেকে ২৫ কেজি করে কেঁচো দেওয়া হয়েছে। সেখানে কেঁচো ৬০ দিন থাকবে, তারপর কেঁচো থেকে গোবর আলাদা করে ছায়ায় শুকাতে হবে। শুকানো শেষ হয়ে গেলে মেশিনে গুঁড়া করে বস্তায় প্যাকেট করে বাজারজাত করার জন্য তৈরি হয় এ সার।
ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের জন্য ইটের পাকা হাউস রয়েছে তিনটি। সেখানে সব উপাদান একত্রে করে একেকটি হাউসে রাখা হয়। এক ঘর থেকে ১০ দিন পরপর কম্পোস্ট আরেকটি হাউসে পরিবর্তন করা হয়। এভাবে তিনটি হাউস পরিবর্তন হলে সেগুলো হাউস থেকে তুলে ছায়ায় শুকাতে দেওয়া হয়। শুকানো শেষ হলে মেশিনে ভাঙানো হয়। তরপর বস্তা বন্দি করে বিক্রি। ভার্মি কম্পোস্ট প্রতি কেজি ১৫ টাকা এবং ট্রাইকো কম্পোস্ট ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন আক্কাস। তাঁর সারের নামকরণ করা হয়েছে ‘বায়োগ্রিন বাংলাদেশ’। খামারবাড়ি কৃষি অধিদপ্তর থেকে তাঁকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে সার কারখানা শুরু করেছিলেন। দেড় বিঘা ছায়া ঘেরা আমবাগান ২০ হাজার টাকা বছরপ্রতি লিজ নিয়ে কারখানা স্থাপন করেন। গত এক বছরে সব খরচ বাদে ২০ লাখ টাকা লাভ করেছেন। আক্কাস আলির আশা, ২০২৫ সাল নাগাদ সার কারখানা থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকা লাভ করতে পারবেন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়