শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২
রাজশাহীর পুঠিয়া বানেশ্বর আমের বাজারে গুটি ও গোপালভোগ আম আসতে শুরু করেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের প্রথমেই অধিকাংশ মুকুল ঝরে পড়ায় হতাশ হয়েছিলেন তারা। তবে বাজারে এসে ভালো দাম পাওয়ার খুশি চাষিরা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফল কম এলেও দামে পুষিয়ে নেয়া যাবে।
গতকাল শনিবার রাজশাহীর চারঘাট, বানেশ্বর, পুঠিয়াসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগান থেকে আগাম গুটি জাতের আম পাড়ছেন চাষিরা। কাঁচা আম ক্যারেট ভর্তি করে তুলছেন গাড়িতে। প্রতিমণ কাঁচা-পাকা আম দিচ্ছেন এক হাজার টাকা মণদরে।
বানেশ্বর বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে গোপালভোগ আম। চাষিরা দুই হাজার টাকা মণ দাম চাইলেও বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়। তারা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার মণপ্রতি দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি। গাছের পরিচর্যা করার পরও ফল আটকানো যায়নি।
পুঠিয়া উপজেলার নামাজ গ্রাম এলাকার একটি বাগানে আম নামাচ্ছিলেন হাজী মোহাম্মদ আতাউর রহমান। চারঘাট থানার সলুয়া এলাকার এ আমচাষির রয়েছে প্রায় দুই হাজারটি বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ। গতবারে আম পেয়েছিলেন প্রায় ১২ হাজার মণ। করোনায় সে সময় তেমন বিক্রি করতে না পারলেও চলতি মৌসুমে আশা করেছিলেন দ্বিগুণ লাভের। তবে তার আশার গুড়ে বালি পড়েছে। এবার মাত্র ছয় হাজার মণ দরে আম পাবেন বলে আশা করছেন। গতবারের তুলনায় ফলন গড়ে ৫০ শতাংশ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খারাপ আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে আম একেবারেই নেই। তার পরও গতবার গুটি আম বিক্রি করেছিলাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে এবার করোনা না থাকায় এই আম বিক্রি করেছি এক হাজার টাকায়। দাম আছে, তাই ফলন নিয়ে চিন্তা করছি না।’
তিনি জানান, এসব আম ঢাকার কারওয়ান বাজার, বরিশাল, ভোলা, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। আমি বরাবরই প্রাণআরএফএল কোম্পানিতে আম বিক্রি করি। গত ১৩ মে জেলা প্রশাসকের দেয়া নির্দেশনা পেয়ে আম নামানো শুরু করেছি।
একই এলাকার আমচাষি মোজাম্মেল হক শেয়ার বিজকে জানান, এবার একেবারেই গাছে আম নেই। গাছ একেবারে ন্যাড়া হয়ে আছে। এবার শুধু বাড়িতে খাওয়ার মতো আম হয়েছে।
গতবারে করোনায় এক ক্যারেট আম বিক্রি করেছিলাম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। এবার তাও পারব না। আমার ২০০টি গাছের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি গাছে বাড়িতে খাওয়ার মতো আম এসেছে। সবমিলিয়ে এবার খুব খারাপ অবস্থা। আমের দাম অনেকটা ভালো আছে।
এদিকে হাজী মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাদের কোনো উপকারই করেনি। তারা যদি আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সামান্য সহযোগিতা করত, তবে কিছুটা হলে আম রক্ষা করা সম্ভব হতো। আবার তারা যে আমের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলছে, তা কোনো দিক দিয়েই সঠিক নয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ টন আমের ফলন হয়। এ ক্ষেত্রে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১৬ হাজার টন আম উৎপাদিত হয়। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছ থেকে অনেক গুটি আম ঝরে পড়ায় ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মোজদার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন ভালো নয়। মৌসুমের শুরুর দিকেই গাছ থেকে আমের মুকুল ও গুটি ঝরতে শুরু করে। তাই আমের ফলনও কম।
আম চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাষিরা একটি এলাকায় থেকে বলছে, আম নেই বা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। কিন্তু আমরা ৯টি উপজেলার তথ্য একসঙ্গে সমন্বয় করে এ তথ্য বের করেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন, এবার চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়াসহ কয়েকটি উপজেলায় আম কম হয়েছে। সহযোগিতা না করার বিষয়টি সত্যি নয়। কেউ সহযোগিতা না চাইলে আমরা বুঝব কীভাবে তার সাহায্য লাগবে?
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়