মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ৪ ১৪৩০
|| ০৯ রমজান ১৪৪৫
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অত্যাধুনিক বিজনেস হাব করার মহাপরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। কাঁচাবাজার সরিয়ে ১২ বিঘা জমিতে সাত তারকা হোটেল, বিনোদন কেন্দ্র, কনভেনশন সেন্টার, ইনডোর খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ কাজে প্রয়োজনীয় ৬-৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহে বাজারে বন্ড ছাড়বে ডিএনসিসি। তবে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচাবাজার সরানো। ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজধানীর ভিতরে কোনো পাইকারি বাজার থাকতে পারে না। এখানে চাঁদাবাজি, অবৈধ ব্যবসা, পার্কিং বাণিজ্য সব হয়। বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে সিটি করপোরেশনকেও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। মার্কেটগুলোকে উন্নত করতে হবে। গুলশান-২-এর সিটি করপোরেশন মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্যমান স্থাপনা ভেঙে সেখানে ৯ বিঘা জমিতে ডিএনসিসি সিটি সেন্টার করব। এর কাজ শুরুর পরই কারওয়ান বাজারের পরিকল্পনায় হাত দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘গুলশান-২-এ পরিকল্পিত সিটি সেন্টারে নগরীর মানুষ পরিবার নিয়ে সবুজ গোছানো পরিবেশে বিনোদন, কেনাকাটা, খাওয়া, ইনডোর খেলায় সময় কাটাতে পারবে। এর ধারাবাহিকতায় কারওয়ান বাজারের মার্কেটকে বিজনেস হাবে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছি। এখানে থাকবে কালচারাল সেন্টার, অপেরা হাউস, থিয়েটার, সাত তারকা হোটেল, কনভেনশন সেন্টার, শপিং মল, ফুড কোর্ট, ইনডোর খেলার জায়গা। এটা হবে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র। কারওয়ান বাজারে ১২ বিঘা জমিতে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা এ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করব।’
এ উন্নয়নকাজের অর্থ জোগানের পরিকল্পনা বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের জায়গা উন্নয়নকাজের জন্য ডেভেলপারকে দিলে তারা ৭০ শতাংশ নিয়ে সিটি করপোরেশকে ৩০ শতাংশ দিতে চায়। এ সমস্যা সমাধানে উন্নয়নকাজে অর্থের জোগানে বাজারে “মিউনিসিপ্যাল বন্ড” ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে আমরা আধুনিক মার্কেট, সিভিক সেন্টার, বিজনেস হাব করব। বন্ড কিনতে গেলে কোম্পানি নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় থাকে। কিন্তু সিটি করপোরেশন যদি বন্ড ছাড়ে সে ক্ষেত্রে অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না। আমরা এটাকে টেস্ট কেস হিসেবে নিয়ে ১-২ হাজার কোটি টাকার বন্ড ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করছি। কারওয়ান বাজারের জন্য ৬-৭ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্ডের মাধ্যমে উন্নয়নকাজের অর্থ সংগ্রহ নতুন উদ্যোগ। মিউনিসিপ্যাল বন্ড সফল হলে সরকার অন্যান্য উন্নয়নকাজে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে পারবে। এতে সরকারের ওপর ঋণের চাপ কমবে। বৈদেশিক সাহায্যের জন্য উন্নয়নকাজ থেমে থাকবে না। ডিএনসিসি মেয়রের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা প্রস্তাব তৈরি করে পাঠালে আমরা দ্রুত তা অনুমোদন দেব।’
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই দেশের বন্ড মার্কেট বিকশিত হোক। বন্ডে মানুষ বিনিয়োগ করলে তাদের লভ্যাংশসহ ফেরত দিতে হবে। বন্ডের কিছু নিয়মকানুন আছে। সেসব ব্যাপারে বন্ড ইস্যু করা যায় যেখানে লাভ হবে। ডিএনসিসি যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সেটা অবশ্যই ভালো।’
কারওয়ান বাজারে বিজনেস হাব করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচাবাজার সরানো। দীর্ঘদিন ধরে এ ইস্যু অনিষ্পন্ন রয়েছে। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের জায়গা দিতে যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, মহাখালীতে পাইকারি বাজার নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ পাস করে ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর। কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ান বাজারের যানজট কমাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে এ তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। তিন দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুনে এর কাজ শেষ হয়। নবনির্মিত বাজারে কাঁচাবাজার সরিয়ে নিতে তৎকালীন ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের কয়েক দফা বৈঠক হয়। কিন্তু ছয় বছরেও সরেনি কাঁচাবাজার।
বাজার সরিয়ে বিজনেস হাব তৈরি চ্যালেঞ্জ কি না- জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর উন্নয়নে এ উদ্যোগ আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এ উদ্যোগে সম্মতি দিয়েছেন। ওই এলাকার সংসদ সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মহাখালীতে নির্মিত বাজারে কভিড হাসপাতাল করা হয়েছে। এখন কারওয়ান বাজার থেকে যাত্রাবাড়ী বাজারে যাবে ৮৬০টি দোকান এবং বাকি দোকানগুলো নেওয়া হবে গাবতলী বাজারে। কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ীদের যত স্কয়ার ফুটের দোকান ছিল নতুন বাজারেও তাদের সেই আকারের দোকানের ব্যবস্থা করা হবে। এতে কারওয়ান বাজারের যানজট নিরসন হয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় বদলে যাবে পুরো এলাকা।’
কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলো সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সবাই এর মধ্যে থেকে ব্যবসা করব এটা আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু যেখানে সেখানে ব্যক্তিমালিকানায় পাইকারি বাজার গড়ে উঠছে। সেটা ঠেকাতে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই। কারওয়ান বাজারের চেয়ে ভালোমানের ব্যবস্থা থাকলে ব্যবসায়ীদের যেতে কোনো আপত্তি নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি, তাদের পরিকল্পনাও জানায়নি। শুধু কিছুদিন পরপর শুনি বাজার সরিয়ে গাবতলী, যাত্রাবাড়ী দেবে। মেয়র আনিসুল হক আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে বাজার সরানোর ব্যাপারে কথা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র আমাদের সঙ্গে একবারও আলোচনা করেননি।’
এ ব্যাপারে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘কারওয়ান বাজার সরানোর ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের সিরিজ মিটিং হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে গাবতলী মার্কেটের পেছনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) জমিতে যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তা চেয়ে আসছিলেন। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বিএডিসির জায়গা দিতে সম্মত হয়েছেন। এখন আমরা ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো মার্কেটে প্রবেশ এবং বের হওয়ার আলাদা রাস্তা তৈরি করে দেব।’
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা সবকিছু সমন্বয় করে কাজ করতে চাই। গাবতলী মার্কেটে যাওয়া-আসার রাস্তা প্রয়োজন বলে ডিএনসিসি আমাদের জানিয়েছিল। এ রাস্তা হলে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে জেনে আমরা বিএডিসির জমি দিয়েছি। অনেক সময় সমন্বয়ের অভাবে অনেক ভালো উদ্যোগ আলোর মুখ দেখে না। আমরা রাষ্ট্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে বড় মানসিকতা নিয়ে যে কোনো ভালো উদ্যোগে পাশে থাকতে চাই।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়