শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২২
রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ধানের গোলা। আগে প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে ধান রাখার জন্য থাকত ধানের গোলা। এখন যেন স্মৃতি হয়ে রয়েছে ধানের গোলা। মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুত করে রাখার বাঁশ-বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি গোলাঘর।
অথচ এক সময় কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর নিত কনে পক্ষের লোকজন, যা এখন শুধু রূপকথা। গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত টিনের বা খড়ের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো, যা দেখা যেত অনেকদূর থেকে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল।
গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ, বাঁশ ফাটিয়ে কাবারি ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গ অথবা আয়তক্ষেত্র আকারে গোলা তৈরি করা হতো। এরপর তার গায়ের ভেতরে-বাইরে মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। এর মুখ বা প্রবেশপথ রাখা হতো বেশ ওপরে যেন চোর-ডাকাতরা চুরি করতে না পারে। ধান বের করার জন্য অনেকে নিচে বিশেষ দরজা রাখত। ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত বাঁশ ও খড়ের তৈরি বা টিনের তৈরি ছাউনি। গোপালপুর এলাকার কৃষক নয়ন বলেন, আমার দাদা, তারপর আমার বাবা ধানের গোলায় ধান রাখলেও আমরা সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি।
কৃষক লালু বলেন, আমার দাদার আমলে ধানের গোলা ছিল। এখন ধান রাখার জন্য মাটির তৈরি কুঠি বা ধানের গোলা দরকার হয় না। গুদাম ঘরে বস্তায় ধান রেখে দেওয়া হয়। এখন কৃষকের ধান চলে যাচ্ছে একশ্রেণির ফড়িয়া ও আড়ত ব্যবসায়ীর দখলে। ইটবালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা ইমারতের গুদাম ঘরে মজুত করে রাখা হচ্ছে হাজার হাজার টন ধান চাল। অনেক ক্ষুদ্র কৃষক বস্তা ও ব্যারেল ভর্তি করে রাখছে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধানচাল। আগামী প্রজন্মের কাছে গোলাঘর একটি স্মৃতিতে পরিণত হচ্ছে। আধুনিক গুদামঘর ধানচাল রাখার জায়গা দখল করছে। ফলে গোলাঘরের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়