শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৬ ১৪৩১
|| ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২১
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুশিত একটি এলাকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকাটি থেকে অনেকটাই দূরে। রাত-বিরাতে এলাকার কেউ হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়াটাই ছিল কঠিন একটা কাজ।
সমস্যার সমাধানে ইউনিয়নের বাসিন্দারা নিজেদের টাকায় নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনেছেন। দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
ইউনিয়নের মোট ১ হাজার ৪৯৯ জন অ্যাম্বুলেন্স কেনার জন্য টাকা দিয়েছেন। ইউপি কার্যালয়ে রশিদের মাধ্যমে টাকা নেয়া হয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ইউপি থেকে বিভিন্ন ভাতা ও উপকারভোগী ব্যক্তিরা তহবিলে টাকা জমা দিয়েছেন। দুবছরে টাকা উঠেছে মোট ১৫ লাখ টাকা। সম্প্রতি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকায় নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকালে ইউপি কার্যালয় চত্বরে এই অ্যাম্বুলেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যারা অ্যাম্বুলেন্স কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেককে চিঠি দিয়ে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের একটি করে গোলাপ দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম।
তিনি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আজ ১৭ মার্চ। মহান ব্যক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিনে দেওপাড়া ইউনিয়নবাসী একটি মহান কাজ জাতিকে দেখিয়ে দিল। এটা গোদাগাড়ী উপজেলাবাসীর জন্য গর্বের। ছোট ছোট উদ্যোগ যে কত বড় হতে পারে তা দেওপাড়াবাসী দেখিয়ে দিলেন। এ জন্য আমি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানাই।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আরাফাত রহমান। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটা অ্যাম্বুলেন্স। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা কোন রোগীর অবস্থা ভাল না থাকলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে একজন রোগীকে পাঠানোর পর দেখা যায় আরেকজন রোগীকেও পাঠানো প্রয়োজন। সেটা আর হতো না। দেওপাড়া ইউনিয়নবাসী তাদের নিজেদের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে স্বনির্ভর হয়ে গেল।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার বললেন, ‘দুবছর আগে তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়ে তহবিল চালু করেছিলেন। তারপর পরিষদের সকল সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি গ্রাম পুলিশেরাও টাকা দিয়েছেন। যারা বিভিন্ন ভাতা ভোগ করেন তাদেরও বুঝিয়ে টাকা দিতে বলা হয়। তারা টাকা দিয়েছেন। সর্বমোট ১ হাজার ৪৯৯ জন ব্যক্তির নাম লেখা আছে দাতা হিসেবে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছেন- টাকা কেন দিতে হবে? কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করেছেন। তাদেরও বিষয়টা বোঝানো হয়েছে। পরে তারাও টাকা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে টাকা দিয়েছেন। একজন সর্বনিম্ন ৪৫ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন এই তহবিলে। মোট ১৫ লাখ টাকা উঠেছে।
এর মধ্যে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়েছে। বাকি টাকা এখনও তহবিলে আছে। অ্যাম্বুলেন্স কিনতে যাওয়া থেকে অন্যান্য খরচ এই তহবিল থেকে করা হয়নি।’ ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনার বাড়ির সামনে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স গেলে আপনি বুক উঁচিয়ে বলবেন- আমার টাকায় কেনা অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাবাজ উদ্দীন, স্থানীয় গির্জার ফাদার মাইকেল কোরাইয়া, ফাদার আয়তুয়ো স্পেশিয়ালে, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় প্রমুখ।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়