মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ৫ ১৪৩০
|| ০৯ রমজান ১৪৪৫
আবুল কালাম আজাদ সনি, চারঘাট
প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২০
মারধরের শিকার বৃদ্ধ ভিখারী রিজিয়া বেওয়া।
রিজিয়া বেওয়া, বয়স ৬৫ বছর। দীর্ঘ ৩০ বছর আগে স্বামী তাকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে। একমাত্র ছেলেও বিয়ে করে সন্তানসহ থাকেন চট্টগ্রাম। সম্বল বলতে রাজশাহীর চারঘাটের চাঁদপুর কাঁকড়ামারীতে ছোট খুপরি একটা ঘর। ভিক্ষা করে মানুষের কাছে থেকে সাহায্য নিয়ে চলে রিজিয়ার একার সংসার।
কিন্তু সারাদেশের মত চারঘাটেও করোনা ভাইরাসের কারনে হাঁট বাজার, জনসমাগম বন্ধ রয়েছে। জনসাধারণের চলাচলও একেবারে সীমিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় রিজিয়া বেওয়া দুই সপ্তাহ যাবৎ বাড়িতেই বসে রয়েছেন। আশেপাশের বাড়ির অনেকেই সরকারি বেসরকারি অনুদানের চাল ডাল পেলেও রিজিয়ার কপালে কিছু জোটেনি।
অবশেষে বাধ্য হয়ে আজ মঙ্গলবার (০৭ এপ্রিল) সকালে তার নিজ এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তির কাছে যান অনুদানের তালিকায় নাম উঠাতে। অনুদান চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হোন তিনি।
বর্তমানে রিজিয়া বেওয়া চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রিজিয়া বেওয়ার ছোট বোন আশরাফুন বেগম জানান, দুই তিনদিন যাবৎ রিজিয়ার ঘরে খাবার নেই। দেশের করোনা পরিস্থিতির কারনে ভিক্ষা করতে বের হতে পারে না। এ অবস্থায় সে মঙ্গলবার সকালে তার প্রতিবেশী বজলু ও নজমুলের বাসায় যায়। বজলু ও নজমুল এলাকায় চারঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক এবং ইউপি সদস্য নৈয়ব আলীর কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিত। ইউনিয়নে পরিষদে যেকোনো সরকারী সাহায্য সহযোগিতা আসলে বজলু ও নজমুল ঐ এলাকার তালিকা তৈরি করে। এজন্যই স্থানীয়রা রিজিয়াকে বজলু ও নজমুলের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
স্থানীয়দের কথা শুনে রিজিয়া বজলু ও নজমুলের বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে অনুদানের তালিকায় তার নামটা উঠাতে বলে। তিনি কোনো ভাতা কিংবা সরকারী অনুদান এখন পর্যন্ত পাননি, সেটাও জানান তাদের। এক পর্যায়ে বজলু এবং নজমুল রিজিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। রিজিয়া গালি দিতে নিষেধ করলে বজলু ও নজমুল দুজন মিলে তাকে মারধর শুরু করে। মেহগনি গাছের ডাল দিয়ে রিজিয়ার মাথায়, হাতে ও পায়ে আঘাত করে। পরবর্তী তাদের আঘাতে রিজিয়া বেওয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসরুমা ইয়াসমিন বলেন, রিজিয়া বেওয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় ও হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। চিকিৎসা চলমান আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, বজলু কিংবা নজমুল আমার কাছের কেউ না। রিজিয়া বেওয়া এর আগে কোনো অনুদান পাননি এটা সঠিক। তবে তার নাম আমরা তালিকাভুক্ত করেছি, সে পরবর্তীতে সহযোগীতা পাবে।
এ বিষয়ে চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সমিত কুমার কুন্ডু বলেন, এ বিষয়ে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাৎক্ষণিক অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তারা পলাতক রয়েছে। তবে তাদের ধরতে আমাদের তৎপরতা চলমান আছে।
স/এমএস
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়