বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১১ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
আবুল কালাম আজাদ সনি, চারঘাট
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২০
ফাইল ছবি।
বর্ষা মৌসুম এলেই নদী পাড়ের মানুষের সর্বনাশা পদ্মা সব কেড়ে নেয়। আবার প্রতি বছর এ পদ্মা আর্শিবাদ হয়ে দেখা দেয় তাদের জীবনে। পলি জমিয়ে জেগে ওঠা চরে সোনার ফসল ফলাতে তাদের জীবনে বড় ভূমিকা রাখছে পদ্মা।
নদী ভাঙনের শিকার এসব মানুষ অভাব আর হতাশকে পেছনে ফেলে নতুন করে আবাদ করে, নতুনভাবে অবতীর্ণ হয়েছে জীবনযুদ্ধে। দারিদ্র্যজয়ী নদী তীরের মানুষ এ বছর শীতের ফসল চাষ করে শত ভাগ সাফল্য পেয়েছে। পেঁয়াজ, মশুরের মত গমেরও বাম্পার ফলনে তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। চরাঞ্চলে নারী-পুরুষ এখন গমকাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আশাতীত ফলন হওয়ায় খুশি চরাঞ্চলের কৃষকরা।
চারঘাটে পদ্মা নদীর চরে এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। নদী ভাঙ্গা মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে গম চাষ করে। চলতি মৌসুমে পদ্মা নদীর চরে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বৃহদাকারে হয়েছে গমের চাষ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও দ্বিগুন জমিতে গমের চাষ হয়েছে এবার। সঞ্চয় হয়েছে অদম্য শক্তি ও সাহস। গম চাষ করে তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। বর্ষা মৌসুমে রাক্ষুসী নদী বসত ভিটা কেড়ে নিলেও এখানকার উৎপাদিত ফসল তাদের শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। চরের যেদিকে তাকানো যায় শুধু ফসল আর ফসল। নানা ধরনের ফসল চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। একারণে তারা মুক্তি পেয়েছে ক্ষুধা ও দারিদ্র থেকে।
অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে চরাঞ্চলের জমিতে গম বীজ বপন করা হয়। ফাল্গুনের শেষে ও চৈত্র মাসের প্রথম দিকে কাটা মাড়াই শুরু হয়। গমের চারা রোপনের পর খুব একটা বেশী সেচ দিতে হয় না। জমি চাষের সময় মাটির নিচে প্রয়োজন মোতাবেক জৈব্য সার ও চারা বড় হওয়ার কিছুদিন পরেই মাটির উপরের অংশে সামান্য ইউরিয়া সার প্রয়োগে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে গম চাষে খরচ হয় কম লাভবান হন কৃষক-কৃষাণীরা।
জানা যায়, নদীপাড়ের মানুষের আর্শিবাদও পদ্মা। নদী যেমন প্রতি বছর ঘর-বাড়ি গ্রাস করছে তেমনি পলি জমিয়ে জেগে ওঠা চরে সোনার ফসল ফলাতেও সমান ভূমিকা রাখছে। তাই তো প্রতিবছর বর্ষা মৌসুষ শেষে পদ্মা আর্শিবাদ হয়ে দেখা দেয় নদী পাড়ের মানুষের জীবনে। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পদ্মা নদীতে চরের পরিধি দিনদিন বেড়েই চলেছে।
চারঘাট সদরের গোপালপুর, পিরোজপুর, থানাপাড়ার সামনে জেগে উঠেছে বিশাল চর। উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, গত ১০ থেকে ১২ বছর আগে পদ্মা নদী তার বাড়ি ঘর গ্রাস করেছে। নদী তাকে সর্বশান্ত করলেও গত ৫ বছর ধরে ওইস্থানে চর জেগে উঠায় সেখানে তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন।
পিরোজপুর এলাকার কৃষক আবুল হোসেন ও বাবলু হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমে চরের জমিতে পানিতে ডুবে থাকে। তখন মাছ ধরে তাদের সংসার চলে মাছ ধরে। চর থেকে পানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার কৃষকরা গমের আবাদ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে গম ঘরে তুলতে শুরু করেছে কৃষকরা। ভালো দাম পাওয়া গেলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনজুর রহমান জানান, এ বছর পদ্মা নদীর চারঘাট উপজেলার চরে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। চরে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয়না। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
স/এমএস
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়