বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৪ ১৪৩১
|| ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২১
নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে রাজশাহীর চারঘাটের বড়াল নদী। বড়াল নদীর মোহনায় সরকারি জমির অবৈধ দখল ও ভরাট করছেন প্রভাবশালীরা। বালু সংরক্ষণের জায়গা ও বালু বহনে ট্রাক যাতায়াতের জন্য তৈরি করছেন রাস্তা।
নদীর মোহনা তীরবর্তী জায়গায় বালু উত্তোলনের ফলে পাড়ের লেভেল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে উঁচু হয়ে পড়েছে। ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। আর এতে পদ্মা নদী থেকে বড়াল নদীর মোহনায় পানির প্রবাহ যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনিই নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এককালের খরস্রোতা এই বড়াল নদী।
নদী সংশ্লিষ্টদের অভিমত, জরুরি ভিত্তিতে নদীর মোহনায় খনন কাজ না করা হলে একসময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দেশের দীর্ঘতম এই নদীটি।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কোল ঘেঁষে প্রমত্তা পদ্মার শাখা নদী ১৪৭ কিলোমিটার লম্বা ও ৪১০ ফুট প্রশস্ত বড়াল নদীটি রাজশাহীর চারঘাট হয়ে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা হয়ে যমুনা নদীর সাথে মিশেছে। একসময় এই নদীতে সারা বছর নৌকা চলতো। মাছ পাওয়া যেত, পানি টলটল করতো। এখন মূলত বর্ষাকালে দুই থেকে তিন মাস পদ্মার পানি প্রবাহের মাধ্যমে এই নদীতে পানি থাকে। আর বাকি মাসগুলোতে পানি শুকিয়ে থাকে। পানি না থাকায় এই নদীতে আর নৌকা চলে না। স্থানীয় লোকজন বর্তমানে এই শুকনো নদীতে এখন বিভিন্ন শস্যের চাষাবাদ করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে প্রমত্তা পদ্মা নদী বর্ষা মৌসুমের কয়েকমাস নেপালের হিমালয় থেকে বয়ে আনা পলি মাটি ও পদ্মার উত্তোলনকৃত বালু বড়াল মোহনায় সংরক্ষণ করছেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা। পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে নদীর স্রোত বন্ধ হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে নদীর সৌন্দর্য।
এছাড়াও এই নদীটির মোহনা থেকে কয়েকশ মিটার দুরে ১৯৮৫ সালে তৈরি হয়েছে একটি স্লুইসগেট। যার সবগুলো গেট বন্ধ থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, এই স্লুইসগেটটি উঠিয়ে দিয়ে পানির সুষ্ঠ প্রবাহ বজায় রাখার। এজন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করলেও স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে কোন সুষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়নি।
দখল আর নাব্যতা সংকটে ধুঁকতে থাকা বড়াল নদীটি দিন দিন সরু খালে পরিনত হচ্ছে। তাই নদীকে রক্ষার জন্য নদীর সীমানা নির্ধারণ ও নদীর ধার দিয়ে ওয়াকওয়ে তৈরি করার তাগিদ দিয়েছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা।
বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বড়াল নদীটির এই ভগ্ন দশায় এই এলাকার সাধারণ জনগণের জীবনমানের বিরুপ প্রভাব পড়ছে। দীর্ঘ এই নদীটি কয়েকটি উপজেলার প্রায় একশোটি ক্যানেল সংযুক্ত রয়েছে। চলনবিলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে, ফসল চাষাবাদে ব্যাপক ভূমিকা রাখতো এই নদীটি।
কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পাম্প কল স্থাপন করে পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে কৃষকদের। পানির লেয়ার মাটির আরও গভীরে নেমে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে আর্সেনিক রোগসহ বিভিন্ন পানি সংক্রান্ত রোগ। মিঠা পানির মাছও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পানির অভাবে। অথচ এই নদীতে মাছ ধরার মাধ্যমে উপজেলার অনেক জেলে জীবিকা নির্বাহ করতো।
বড়াল নদীর এই দুর্দশার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম। এছাড়া নদীটির উৎপত্তিস্থল রাজশাহীর চারঘাটে হলেও এটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ফলে এ বিষয়ে কোন কাজের বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। হারিয়ে যেতে থাকা এই নদীকে দখলমুক্ত ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে অতিবিলম্বে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবোর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, পদ্মা-বড়াল নদীর মোহনায় খনন করে নদীটির নাব্যতা উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এর বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়