শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৬ ১৪৩১
|| ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২২
জনবল সংকট ও তদারকির অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার একমাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। নামে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ডাক্তার নেই সেবাও নেই। মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে উপজেলা একমাত্র এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।
জানা যায়, প্রায় ছয় বছর ধরে ডাক্তারের পা পড়েনি ওই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। বর্তমানে সেখানে কোনো ডাক্তারের নিয়োগ নেই। এর আগে ডাক্তার নিয়োগ থাকলেও কখনোই তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখা যায়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন পদে জনবল না থাকায় গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ গ্রামীণ শিশু, নারী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলার একমাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র চারঘাট পৌরসভার সরদহতে অবস্থিত। এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, মিডওয়াইফ, উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট, অফিস সহায়কসহ ৬টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ফার্মাসিষ্ট ছাড়া বাকি পদ গুলো খালি রয়েছে।
আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন রোগীরা। রোগীর সংখ্যাও একেবারে কম। জনবল না থাকায় এবং নিয়মিত তদারকির অভাবে ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নতুন ভবনের মুখোমুখি নির্মিত পুরোনো ভবনটিতে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক সেবন। বছরের পর বছর পরিত্যক্ত এ ভবনে এভাবে মাদক সেবন চললেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার আস্করপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সখিনা বেগম বলেন, ‘আমার নাতনির পেট ব্যথা ও জ্বর। এসেছিলাম ওষুধ নেওয়ার জন্য। এখানে ডাক্তার নেই, ওষুধও নেই। মাদকের গন্ধে দাঁড়ানোর উপায় নেই। এ জন্য বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’
গৌড় শহরপুর এলাকার মাজদার রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। শুধুমাত্র একজন উপসহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা আছেন। জরুরি প্রয়োজনে গুরুতর রোগীরা বাড়ির কাছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সঠিকভাবে দেখভাল না করায় কেন্দ্রটি ঝোপঝাড় ও মাদকসেবীদের আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। পুরোনো ভবনটি ভাঙার কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছেনা প্রশাসন।’
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা মাইমুনা খাতুন বলেন, ‘উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারসহ জনবল সংকট রয়েছে। সব সময়ই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। মাদকসেবীদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও সমাধান নেই। পরিত্যক্ত ভবনটি অপসারণের ও কোনো উদ্যোগ নেই।’
মাইমুনা খাতুন বলেন, ‘আমি একজন মেয়ে হয়ে সব সময়ই এখানে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগি। প্রায়ই সকালে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে মাদকসেবীদের সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। মাদকের গন্ধে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকা কঠিন। মাঝে মধ্যেই চুরির ঘটনা ঘটে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘আপাতত ওখানে ডাক্তার নেই। পুরোনো পরিত্যক্ত ভবনে মাদকসেবীদের আড্ডা হয় এটা তিনি জেনেছেন। ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে তাদের আপাতত বাজেট না থাকায় ভাঙার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়