বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০
দীর্ঘ সাত বছর পর হেফাজত ইসলামের নাম ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পিত সমাবেশের আসল রহস্যের উদঘাটন হয়েছে। সুত্র মতে, ২০১৩ সালের ৫ মে’র রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশের ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত ছিলো। হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার পর সকল ষড়যন্ত্র পরিস্কার হয়ে গেছে।
বিএনপি-জামায়াত আর উগ্রপন্থিদের নেতৃত্বে হেফাজত ইসলামের কিছু নামধারি কতিপয় মৌলভীদের ইশারায় নিরিহ মৌলভীদের একত্র করে সমাবেশের আয়োজন করে রাজধানী অবরুদ্ধ করেছিলো তারা। তাদের একটি উদ্দেশ্য ছিলো সাধারণ মানুষের মনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্রেন ওয়াশ করা আর পাকিস্তানি শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এশিয়ার প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হাটহাজারী মাদরাসা ও বাংলাদেশের কওমী মাদরাসার জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি প্রকাশ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন এবং বই লিখেছেন।
এ কারণে তার ওপর জামায়াত-শিবিরের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। শাপলা চত্বরে জামায়াত-বিএনপির ফাঁদে পা না দেয়ায় তখন থেকেই শফী হুজুরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতা হয়।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর-২০২০ পাকিস্তানের দোসর জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। শফী হুজুরের হাতে গড়া অরাজনৈতিক কওমি সংগঠনকে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির হাতে তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
পারিবারিক সুত্র মতে, গত ১৪ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে’ দাবি করে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছিলেন তার শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন। আল্লামা শফীর স্ত্রী বিবি ফিরোজা বেগমের পক্ষ থেকে তিনি এ দাবি তুলে ধরেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় জামায়াতের লেলিয়ে দেয়া ক্যাডার বাহিনীকে ব্যবহার করে মাদরাসা অবরুদ্ধ করা হয়। আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী মাদরাসায় অবস্থান করে মীর ঈদ্রীস, নাছির উদ্দিন মুনীর, মুফতি হারুন ইজহার, ইনামুল হাসান গংদের দিয়ে মাদরাসায় লুটতরাজ ও ভাঙচুর শুরু করেন। এমনকি প্রকাশ্যে কোরআন-হাদিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হযরতের খাস কামরায় ভাঙচুর চালানো হয়। হযরতকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।’
এসময় হামলায় হুজুর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে অনেক কষ্টে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে বের করা হলেও অসুস্থ হযরতের অক্সিজেন লাইন বারবার খুলে দেয়ায় তিনি মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়েন। এছাড়া পরিকল্পিতভাবে তার অ্যাম্বুলেন্স আটকে হযরতকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়।’
পরিবারের দাবি, হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস নেই। কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হেফাজতে ইসলাম নয়। এখন জামায়াত-শিবিরের প্ররোচনায় কাজ করছে তারা। আল্লামা শাহ আহমদ শফী যে উদ্দেশ্য নিয়ে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার বিপরীতে গিয়ে আজকে কিছু সংখ্যক উচ্চাভিলাসী এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, কয়েক দশক ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন শাহ আহমদ শফী। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশেরও (বেফাক) সভাপতি পদেও দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। হেফাজতে ইসলাম নামে যে সংগঠন গড়ে ওঠে, শুরু থেকে সেটির আমিরের দায়িত্বও তিনি পালন করছিলেন কওমী মাদরাসার নেতৃত্বের ওপর ভর করেই।
আহমদ শফীর উত্তরসূরী হওয়ার দ্বন্দ্ব চলছিল মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালক জুনাইদ বাবুনগরী ও শফীর ছেলে আনাস মাদানীর মধ্যে। এর জের ধরে গত ১৭ জুন সহকারী পরিচালকের পদ হারান বাবুনগরী। কিছুদিন পর মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হলে ১৫ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে মাদরাসার মধ্যেই। এ সময় প্রধান গেইট লাগিয়ে দিয়ে মাদরাসার মধ্যে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসার শুরা কমিটি বৈঠকে আনাস মাদানীকে মাদরাসার সহকারী পরিচালকসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর মুহতামিম আহমদ শফী নিজে ‘পদত্যাগ’ করেন। ওই দিনই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শফীকে চটগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মারা যান আহমদ শফী।
আল্লামা শফীর পদত্যাগের পর থেকেই হেফাজত ও হাটহাজারী মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বাবুনগরীর হাতে। এদিকে শফীর জানাজায় জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়। জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে জুনাইদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে।
পরিবারের পক্ষ থেকে, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সদ্য প্রয়াত মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় সংগঠনটির যুগ্মমহাসচিব মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন আহমদ শফীর শ্যালক মাঈনুদ্দিন।
অভিযুক্তরা হলেন- মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মামুনুল হক, মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজুয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, মো. এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, মাওলানা জাফর আহমেদ, মীর জিয়াউদ্দিন, আহমদ, জুবাইর মাহমুদ, এইচ এম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহা, মো. আহমদ কামাল, মো. নাছির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাছেমী, মো. হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জুবাইর, মুহাম্মদ, আমিনুল হক, রফিক সোহেল, মবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েম উল্লাহ ও মাওলানা হাসান জামি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়