শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩
নীল চাষের কথা উঠলেই আমাদের মনে পড়ে যায় সেই ইংরেজ শাসনামলের কথা। যখন কৃষকদের ওপর চালানো হতো নিদারুণ নিপীড়ন আর নির্যাতন। কৃষকরা নীলচাষ করতে না চাইলেও ইংরেজ ব্যবসায়ীরা তাদের বাধ্য করতেন নীল চাষে।
বর্তমানে সেই দিন আর নেই, দেশ আজ স্বাধীন। নীলচাষও আর নেই। কিন্তু সেই নীল চাষের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা আজও রয়ে গেছে। এরকম একটি জায়গা হলো রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ। স্থানীয়দের কাছে নীলকুঠি নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে এটি একটি রেশম বীজাগার।
স্থানীয়রা জানান, আমরা এলাকার মুরব্বিদের মুখে শুনেছি, ইংরেজ শাসনামলে মীরগঞ্জ সদরের এ জায়গায় প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর নীল প্রস্তুত কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। পরবর্তী সময় তা রেশম বীজাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। বর্তমানে এই বীজাগারটির অবস্থা প্রায় রুগ্ণ। এ এলাকায় আমচাষ লাভজনক হওয়ায় মানুষ রেশমের দিকে আর ঝুঁকছেন না। ফলে বীজাগারের উৎপাদন কমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মীরগঞ্জ রেশম বীজাগারের অবকাঠামো ১৯০৫ সালের দিকে তৈরি হয়। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে সরকার ‘বাংলাদেশ রেশম বোর্ড’ গঠন করলে অন্যান্য সব স্থাপনা-সহ নীলকুঠি ভবনটি রেশম বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেশমচাষিদের চাহিদা অনুযায়ী রোগ মুক্ত রেশম ডিম সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে মীরগঞ্জ রেশম বীজাগার।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ৮-১০ বছর আগেও মীরগঞ্জ রেশম বীজাগার সারা দেশে রোগমুক্ত রেশম ডিম ও তুঁত চারাসহ পলুপোকা সরবরাহের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করত। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আমচাষ লাভজনক হওয়ায় আগের মতো এই এলাকায় আর তুঁত চারা ও রেশম সুতা সৃষ্টিকারী পলুপোকার চাষ হচ্ছে না। এখন যেটুকু হচ্ছে তা কেবলই সরকারিভাবে বীজাগারের জমিতে। এর ফলে একদিকে যেমন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থান কমেছে, অন্যদিকে হারিয়ে যাচ্ছে বীজাগারের ঐতিহ্য।
মীরগঞ্জ গ্রামের আব্দুর রহমান ও তোয়াফ আলী জানান, এক সময় তাদের পিতা ও চাচা-সহ অত্র এলাকার লোকজন জমিতে তুঁত চারা উত্পাদনসহ ঐ বীজাগার থেকে ডিম এনে পলুপোকার চাষ করত নিজ বাড়িতে। কিন্তু বর্তমানে আমচাষসহ অন্যান্য ফসল লাভজনক হওয়ায় তারা কেউই আর পলুপোকার চাষ করেন না।
একই কথা বলেন, পাশের গ্রামের মিজানুর রহমান। মীরগঞ্জ বীজাগারের স্থানীয় শ্রমিক মুকুল হোসেন ও আজাদ আলী জানান, আমরা এখানে ৪৯ জন তালিকাভুক্ত শ্রমিক রয়েছি। এর মধ্যে একেক জনের প্রতিমাসে কাজ হয় ৮ থেকে ১০ দিন। মজুরি ৪৫০ টাকা। বাকি সময় আমরা অন্যত্র কাজ করে সংসার চালাই।
এ বিষয়ে মীরগঞ্জ রেশম বীজাগারের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার আব্দুল মালেক উৎপাদন কমে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বছর বীজাগারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক থেকে দেড় লাখ ডিম। যা চারটি স্কিমে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, যে নীলকুঠি দিয়ে এই স্থাপনার সৃষ্টি হয়েছিল সেই নীলগাছের নমুনা হিসেবে এখনো দু-একটি চারা রাখা হয়েছে বীজাগারের চত্বরে। যা দেখতে আসে আজকের প্রজন্ম। তার মতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আগের মতো পলু পোকার উত্পাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়