বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২০
মহামারী করোনা ভাইরাসে এই বিপদের সময় রাজশাহীর তানোর উপজেলায় একমাত্র গ্রাম ডাক্তাররায় নিজেদের ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বেশিরভাগ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এমবিবিএস ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ সাধারণ রোগীর।
সরেজমিনে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা তানোর পৌরশহরের সাজেদা বিবি বলেন, ‘আমার বাবুর ঠান্ডা-কাঁশি। এসেছিলাম শিশু ডাক্তার দেখাতে, দুইদিন এসে ফিরে গেছি। পরে বাড়ির পাশে আমার এক কাকাকে (গ্রাম ডাক্তার) দেখায়ছি। এখন বাবু ভাল হয়ে গেছে।’
তানোর পৌরশহরের জিরোপয়েন্ট থানা মোড় এলাকার গ্রাম ডাক্তার হামিদুর চৌধুরী বলেন, আমার একটি জীবনের বিনিময়ে যদি এদেশের হাজারো মানুষের জীবন বেঁচে যায় তাহলে আমি হাজারো মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবো।
আমি মনে করি একজন আদর্শবান ডাক্তার কখনও তার সেবা থেকে সরে থাকতে পারে না, আমি দেশবাসী সকলের কাছে দোয়া চাই, যেন আপনাদের সকলের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি যেকোনো মহামারী ও দুর্যোগ মোকাবেলায় আপনাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
শহরের গোল্লাপাড়া এলাকার গ্রাম ডাক্তার নয়ন কুমার বলেন, আমরা অনেক ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে মানুষের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে বড় ডাক্তারদের হুমকি ধামকি।
তিনি আরও বলেন, এমবিবিএস ডাক্তার না পেয়ে নিরুপায় হয়ে আমাদের কাছে অনেক অসহায় রোগী আসে। আমরা যতদূর সম্ভব চিকিৎসা সেবা দিই।
পেটে ব্যথা নিয়ে আসা চাপড়া এলাকার কাজলি বিবি বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার পাইনি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। পরে বাধ্য হয়ে গ্রাম ডাক্তার সহাদেবের কাছে আসছি। ওনার চিকিৎসায় আমি এখন ভাল।
চাপড়া এলাকার গ্রাম ডাক্তার উত্তম কুমার নন্দী বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার কম থাকায়; গ্রাম ডাক্তারদের কাছে রোগীরা বেশি আসছে। তবে আমি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চিকিৎসা দিচ্ছি এমনকি ফোনেও দিচ্ছি।
পৌর শহরের গোল্লাপাড়া এলাকার গ্রাম ডাক্তার আব্দুল হান্নান জানান, করোনাভাইরাসের ফলে যানবাহান চলাচল না করায় অনেক রোগী আসতে পারছে না। আগের চেয়ে রোগীর চাপ বেশি।
জরুরি প্রয়োজনে রোগীদের আসতে বলি এবং তাদেরকে মোবাইলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি এবং নিজে সচেতন থেকে ও স্বাস্থ বিধি মেনে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তানোর উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুস সুবহান দিলিপ জানান, উপজেলায় প্রায় ৩৫০ জন গ্রাম ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমার গ্রাম ডাক্তার ভাইরা এই দুর্যোগকালীন মুহূর্তে দেশের মানুষকে সেবা করছে। তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, সবাই আমার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছে, আমার পক্ষে তাদের জন্য উৎসাহ-অনুপ্রেরণা ছাড়া কিছুই নেই। রোগীরা আপনার কাছে যতদ্রুত আসতে পারবে বড় ডাক্তারের কাছে তত দ্রুত আসতে পারবে না। এই দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের পাশে থাকলে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই আপনাদের পাশে সহযোগিতা করবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে মানুষের সেবায় নিয়োজিত একমাত্র গ্রাম ডাক্তার।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. রোজিয়ারা খাতুন বলেন, যারা গ্রাম ডাক্তার রয়েছেন, তারা যে প্রাথমিক সেবাটি দিচ্ছেন আমি সেটাকে মন্দ বলবো না; তবে তারা যেন নিজেকে সুরক্ষিত রেখে সেবা দেন।
আর যতদূর সম্ভব টেলিমেডিসিন পদ্ধতি ব্যবহার করে মোবাইলের মাধ্যমে সেবা দেন। এতে করোনা ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়