শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৬ ১৪৩১
|| ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
শীতে রীতিমতো কাঁপছে আমেরিকা। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা নামতে শুরু করে। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ৭২ শতাংশই চলতি সপ্তাহে ফারেনহাইট স্কেলে শূন্যের ৭০ ডিগ্রি নিচের তাপমাত্রায় বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। তাপমাত্রা অতটা কম না হলেও বাতাসের কারণে এমনটি অনুভূত হচ্ছে। নিউইয়র্কের অবস্থাও ভয়াবহ। চারপাশ সাদা হয়ে আছে বরফে। চোখ ঝলসে দেওয়ার মতো সাদা। আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে শূন্যের অনেক নিচের তাপমাত্রা বোধ হচ্ছে। মূল ধাক্কাটি যাচ্ছে আমেরিকার মধ্য-পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে। বিশেষত শিকাগো, উইসকনসিনে স্মরণকালের সবচেয়ে তীব্র হিম প্রবাহে জনজীবন একেবারে থমকে দাঁড়িয়েছে। ইলিনয়, আইওয়া, মিনেসোটা, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, কানসাস, মিজৌরি ও নেব্রাস্কায় হিমপ্রবাহের কারণে রাজ্য সরকারগুলোকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছে। এমনকি ২৯ জানুয়ারি থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছে ডাক বিভাগের চিঠিপত্র বিলিও। এমনটি আমেরিকার ইতিহাসে আগে কখনোই ঘটেনি। ৩০ জানুয়ারি নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, পেনসিলভানিয়াসহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতেও তাপমাত্রা দ্রুত নেমে আসে। হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসা তাপমাত্রায় জনপদ রীতিমতো থমকে দাঁড়িয়েছে। শুধু জনজীবন থমকে দাঁড়ানোই নয়, এখন পর্যন্ত এই ভয়াবহ ঠান্ডায় আমেরিকাজুড়ে ১২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উইসকনসিন, ডেট্রয়েট, ইলিনয়, আইওয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে এ মৃত্যুর খবরগুলো পাওয়া গেছে। অ্যান্টার্কটিকা থেকে আসা হিমপ্রবাহের কারণে আমেরিকার অধিকাংশ অঞ্চলের তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। কোনো কোনো অঞ্চলে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে গেছে। নর্থ ডাকোটায় ৩০ জানুয়ারি এ তাপমাত্রা ছিল শূন্যের নিচে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও এসব অঞ্চলে হিমপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে শূন্যের নিচে ৫০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। নিউইয়র্কে এ তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে।
অবস্থা এতটাই বাজে হয়ে গেছে যে, গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কনজিউমারস এনার্জি তাদের গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। না হলে গ্যাস সরবরাহ সংকট হতে পারে সতর্ক করেছে তারা। শিকাগো শহরের মেয়র র্যাম ইমানুয়েল বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা সত্যিকার অর্থে জনস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি। এর মোকাবিলায় সবাইকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বর্তমান এই পরিস্থিতি জীবনের জন্য বড় হুমকি তৈরি করেছে। এরই মধ্যে আমেরিকাজুড়ে ২ হাজার ৭০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি আরও ১ হাজার ৮০০টি ফ্লাইট বাতিল হতে পারে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। বর্তমানে মধ্য-পশ্চিমের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হিমপ্রবাহ এক সপ্তাহের মধ্যেই নিউইয়র্কের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে বলে সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া সংস্থা। এই প্রবাহের সরাসরি প্রভাব পড়বে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোয়। এরই মধ্যে দক্ষিণের দুই অঙ্গরাজ্য আলাবামা ও মিসিসিপিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ১ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় হয়ে উঠবে। তবে সপ্তাহের শেষ দিকে পরিস্থিতির আবার অবনতি হতে পারে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান হার্লির মতে, এবারের হিমপ্রবাহ দক্ষিণ মেরু থেকে মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সপ্তাহজুড়ে শক্তিশালী অবস্থান নেবে। তুষারঝড় ও তীব্র তুষারপাত ওহাইও ভ্যালিসহ গ্রেট লেক অঞ্চল এবং নিউ ইংল্যান্ডের বিরাট এলাকায় তাণ্ডবের কথা পূর্বাভাসেই বলা হয়েছে। মিশিগান রাজ্যের কেন্দ্রীয় এলাকাসহ ডাকোটা, সেন্ট পল ও মিনেসোটায় এক ফুটের বেশি তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক আপস্টেট এলাকা, ভারমন্ট ও নিউ হ্যাম্পশায়ারসহ বোস্টনে কোথাও হালকা, কোথাও ভারী তুষারপাতের আগাম সতর্কতা রয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও বচন থামেনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ৩০ জানুয়ারি দেওয়া এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘মধ্য-পশ্চিমের তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ৬০ ডিগ্রিতে (ফারেনহাইট) নেমে গেছে। একটি রেকর্ড। সামনের দিনগুলো আরও ঠান্ডা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সময়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কোন চুলায় গেল? দয়া করে দ্রুত ফের এসো, তোমাকে আমাদের প্রয়োজন!’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জাতীয় এ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রেসিডেন্টের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। শীতে কাবু আমেরিকার মানুষ বিষয়টিকে প্রেসিডেন্টের দিক থেকে একটি তামাশা হিসেবে দেখছে। যদিও এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও প্রমাণ করলেন যে, তিনি আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্য পার্থক্য আদৌ বোঝেন না।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়