শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৭ ১৪৩১
|| ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২১
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার হাট কানাপাড়া জোবেদা ডিগ্রি কলেজ মাঠের ভেতরেই রয়েছে গো-প্রজনন উপকেন্দ্র। প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর ধরে কাটছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ দিনের পর দিন এই সমস্যার কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, একেবারেই কলেজের ভেতরে রয়েছে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের আওতায় গো-প্রজননের উপকেন্দ্র। প্রতিদিনই এখানে কৃষকরা গরু নিয়ে আসেন প্রজনন ঘটাতে। এতে অনেকটায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রবেশের সময় নাক ধরে মাঠের মধ্যে দিয়ে আসছেন।
সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হাট কানাপাড়া জোবেদা ডিগ্রি কলেজ। পড়াশোনায় বেশ সুনামও রয়েছে কলেজটির। বর্তমানে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে কলেজটিতে। তবে কলেজ চত্বরে গরু প্রজনন উপ-কেন্দ্র গড়ে ওঠায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে শিক্ষার পরিবেশ।
গো-প্রজনন উপকেন্দ্রের ভিএফএ ইকবাল হোসেনের ভাষ্য, কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৯৪ সালে। কিন্তু তারও ২০ বছর আগে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে গো-প্রজনন কেন্দ্রটি এখানে স্থাপিত হয়েছে। এছাড়া আমাদের এই অফিসটি থাকার কারণে জনকল্যাণ হয় বেশি, অসুবিধা নয়। আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কোনো প্রশ্নই ওঠে না, তাহলে আমরা থাকি কী করে?
তিনি আরও বলেন, কোনো এক সময় এই এলাকার এমপি কলেজ মাঠ থেকে এটি সরানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি অসমাপ্তই থেকে যায়। তবে বর্তমানে শিক্ষক ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অভিযোগের বিষয়টি বেশ কয়েক দফায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে প্রজনন কেন্দ্রটি স্থানান্তরের দাবিতে একাট্টা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সচেতন অভিভাবকরা।
তাদের অভিযোগ, কলেজ প্রতিষ্ঠার পরপরই এই গো-প্রজনন কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত করার কথা ছিল। কিন্তু সুদীর্ঘ ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে উদাসীন রাজশাহী প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এতে ২৭ বছর ধরে কলেজে পাঠদান ও দৈনন্দিন কার্যাবলীতে পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা। নষ্ট হচ্ছে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ।
কলেজের অধ্যক্ষ আব্বাস আলী বলেন, কলেজ চলাকালীন সময়ে উন্মুক্ত পরিবেশে গরুর প্রজনন করায় শিক্ষক-শিক্ষর্থীদের মধ্যে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এসব কারণে অনেক সচেতন অভিভাবক তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করতে চাচ্ছেন না। তাছাড়া কলেজে যাতায়াতের জন্য যে রাস্তা রয়েছে তার পাশেই এই প্রজনন কেন্দ্রের অবস্থান। এতে বাজে গন্ধে নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
তিনি বলেন, বহুবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে বিষয়টি বলা হয়েছে। তবুও কোনো কাজ হচ্ছে না। এর ফলে এভাবে কাটছে দিন।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল কাদির বলেন, বিষয়টি এর আগেও আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। প্রয়োজনে আবারো লিখিতভাবে বিষয়টি জানাবো।
এদিকে রাজশাহী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আক্তার হোসেন জানান ভিন্ন কথা। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলছেন, কলেজ হওয়ার বহু বছর আগে ওই জায়গাতে আমাদের উপজেলা পর্যায়ের প্রাণীসম্পদ অফিস রয়েছে। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে কোনো প্রজনন করা হয় না, করা হয় ইনজেকশন টাইপের যন্ত্র দিয়ে কৃত্তিমভাবে।
এছাড়া কেউ কৃত্রিমভাবে প্রজনন করাতে চাইলে তাদের বাড়িতেই গরু নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া যে জায়গাতে আমাদের গো-প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে সেটি অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, দূর্গন্ধ ছড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না।
তিনি বলেন, দুর্গাপুরের ওই কার্যালয়টিতে গো-প্রজনন কম হয়। তার চেয়ে বেশি হয় গবাদি পশুর চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে ওই এলাকার মানুষই উপকৃত হয় বেশী। প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ওই জায়গাটি বহুবছর পূর্বে এক ব্যক্তি দান করে যান, যার খাজনা-খারিজসহ যাবতীয় ভ্যাট-ট্যাক্স আমরা সময়মতো আদায় করি। সত্যি বলতে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে জায়গাটি নিজ দখলে নিতে। এ কারণেই এমন অপপ্রচার।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়