শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১ মে ২০২১
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার এক সময়ের খরোস্রোতা রাইচাঁদ নদীর তীরে এখন সবুজের সমারোহ। বর্ষায় যেখানে শুধু পানি আর পানি সেখানে এখন চাষ হচ্ছে নানা জাতের ফসল। রাইচাঁদ নদীর তীরে শুকনো মৌসুমে আবাদ করা হয়েছে ইরি-২৮ ও ২৯, বোরো ধান, মাষকলাই, নানা ধরনের সবজি। সময়ের বিবর্তনে রাইচাঁদ নদীর বুকে পলি জমে এ অবস্থা হয়েছে।
গত এক যুগ যাবৎ নদীর বেশিরভাগ অংশ জুড়ে বর্ষা মৌসুম বাদে অন্য সময় চলে এমন চাষাবাদ। রাইচাঁদ নদীর দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর, কাঁশিপুর, বেলঘরিয়া, ভবানীপুর উজালখসী, নামোদুরখালী সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার অংশে ধানসহ ফলানো হচ্ছে নানা ফসল।
উজালখলসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, এক সময় এই নদীতে প্রবল স্রোত ছিল। এই নদীর ধারেই প্রায় দুইশত বছরের পুরানো ঐতিহাসিক ঘোড়াদহ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা কেন্দ্র করেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট বড় নৌকায় করে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় আসতো।
এখন চারিদেক ছোটবড় ব্রীজ কালভাট তৈরি হওয়ায় দুরদুরান্তে আর নৌকা চলাচল হয় না। তবে বর্ষা মৌসুমে এই নদী বেয়ে এখনও মানুষজন ছোট নৌকায় করে বাজারে যাতায়াত করে।
তিনি আরও বলেন, রাইচাঁদ পূর্ব দিকে দিয়ে তাহেরপুর হয়ে বারইন নদীতে মিলিত হয়েছে। আর পশ্চিম দিক দিয়ে হোজানদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাইচাঁদ নদী দুর্গাপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নরে নামোদুরখালী, নারায়ণপুর, কিমসত গণকৈড় ইউনিয়নের ভবানীপুর, উজালখলসী, আড়ইল, পানানগর ইউনিয়নের বেলঘরিয়া, আলীপুর, পৌর এলাকার দেবীপুর সহ বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের ফসল চাষ করা হয়েছে। নদীটির গতিপথ পরিবর্তন করে বর্তমানে কৃষকের চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর উপরে সেতু না থাকলে বোঝার উপায় ছিল না এটা নদী নাকি ফসলের মাঠ।
কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নের কৃষক সেলিম উদ্দিন বলেন, এ নদী দিয়ে বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্টিমার চলাচল করত। এখন আর আগের মতো দীর্ঘ সময় নদীতে পানি থাকে না। বন্যার সময় ৩-৪ মাস নদীতে পানি থাকে। বছরের বাকি সময় থাকে শুকনো। তবে প্রতি বছর বন্যার সময় নতুন পলি মাটি জমে ফসল ভালো হয়।
ভবানীপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এক সময় নদী অনেক গভীর ছিল। ফাল্গুন-চৈত্র মাসেও নদীতে নৌকা চলাচল করত। এখন নদী মরে গেছে। কারণ নদীর সব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গেছে। যে কারণে স্থানীয় কৃষকরা নদীকে বানিয়েছেন ফসলের মাঠ।
আরেক কৃষক মোকলেছুর রহমান বলেন, রাইচাঁদ নদী আগের মতো নেই। নদীতে পানি নেই, তাই নদীর বুকজুড়ে ধানসহ যেকোনো ফসল চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পলি পড়ে। এতে মাটি খুবই উর্বর থাকে। ফলে সব রকমের ফসল ভাল হয়। সব এলাকার নদী গুলোই এখন প্রায় নাব্য হারিয়ে ফসলী জমিতে পরিণত হচ্ছে। দখল হয়ে যাচ্ছে নদীর চারপাশ। মানুষের যাতায়াতের সুবির্ধাথে নদীর দিয়ে তৈরি হচ্ছে ছোট বড় ব্রীজ কালভার্ট। ফলে ছোট ছোট নদী ও খাল গুলো বাচাঁনো কঠিন হয়ে পড়েছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়