বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২১
রাজশাহীর দুর্গাপুরে স্কুলগুলোতে আগে কোনো স্থায়ী শহিদ মিনার ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারত না স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহিদ মিনার বানিয়ে দিবস পালন করা হতো। বর্তমানে উপজেলার ৭৫টি বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়েছে শহিদ মিনার।
এবারের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস থেকে তাদের আর অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি করতে হবে না। এবার স্থায়ীভাবে নির্মিত স্মৃতির মিনারে শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে শিক্ষার্থীরা। তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে দুর্গাপুর শিক্ষা অফিস। আন্তরিকতা ও ইচ্ছা থাকলে যে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায় তা প্রমাণ করলো দুর্গাপুর শিক্ষা অফিস।
উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে শহিদ মিনার স্থাপন করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোখলেছুর রহমান। তিনি এই করোনাকালে উপজেলার ৭৫টি বিদ্যালয়ে নির্মাণ করেছেন শহিদ মিনার।
উপজেলায় এতদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহিদ দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশুদের যেতে হতো অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে। আবার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থায়ীভাবে শহিদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করতো।
কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার না বানিয়ে শুধু আলোচনা সভা বা মিলাদ মাহফিল করে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে তাও করা হয় না। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে দিবসটি পালিত হয় সরকারি ছুটি হিসেবে।
শিক্ষকরা বইয়ে ছবি দেখিয়ে শিশুদের শহিদ মিনার চেনাতো। কিন্তু এখন উপজেলার শিশুদের আর ছবি দেখে শহিদ মিনার চিনতে হবে না। বিভিন্ন দিবসে ফুল দিতে যেতে হবে না অন্য জায়গায়। এখন তাদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তৈরি হয়েছে শহিদ মিনার।
জানা গেছে, উপজেলায় ৮৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে কোন শহিদ মিনার ছিল না। এতদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহিদ দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশুদের যেতে হতো অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে। আবার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থায়ীভাবে শহিদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করতো।
গত বছরের শেষের দিকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদেন মোকলেছুর রহমান। তারপর পরিকল্পনা করেন সব স্কুলে শহিদ মিনার তৈরির। সরকারি কোনো বরাদ্দ নয়, স্কুল ফান্ডের নিজস্ব তহবিল থেকে তৈরি করা হলো নান্দনিক এসব শহিদ মিনার।
উপজেলার যুগিশো তোতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসুল, তানিশা ও জোহুরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার ছিল না। বিভিন্ন দিবসে তাঁরা অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা নিবেদন করতো।
এবার স্কুলে নতুন শহিদ মিনার নির্মিত হয়েছে। এতে আনন্দের সহিত বিভিন্ন দিবসে সকল শিক্ষার্থীরা শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার সিংগা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাক্তিবুল ইসলাম ও দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা জানান, স্কুলে স্কুলে শহিদ মিনার নির্মাণ হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি।
এবার শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ বিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি প্রথম শ্রদ্ধা জানাতে পারবে। স্কুলে স্কুলে এমন শহিদ মিনারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তারা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান জানান, তিনি পবা উপজেলায় থাকা অবস্থায় সব বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার স্থাপন করেছেন। গত বছরের শেষের দিকে দুর্গাপুর উপজেলায় যোগদানের পর এ উপজেলায় সব স্কুলে নিজস্ব অর্থায়নে শহিদ মিনারের পরিকল্পনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বীর শহিদদের প্রতি কোমলমতি শিশুরা যাতে শ্রদ্ধা জানাতে পারে এবং দিবসগুলোর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারে, সেজন্য শহিদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন হয়েছে। আরও ৮ বিদ্যালয় রয়েছে নতুন ভবনের কাজ চলছে। এজন্য ওই ৮টি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার তৈরিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়