শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৭ ১৪৩১
|| ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২০
করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নোয়াখালীতে ৪০, বরিশালে ৮ ও ৯ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিককে জরিমানা ও কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শুক্রবার (২০ মার্চ) দুপুরে নোয়াখালীর চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলা, বরিশাল নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাজার মনিটরিং অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বরিশালে ৮ জনকে কারাদণ্ড এবং ২ লাখ ৬১ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
জানা যায়, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বরিশাল নগরের ফরিয়াপট্টিতে বাজার মনিটরিংয়ের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রয়কারী তিনটি দোকানে মূল্য তালিকা না থাকা এবং অধিক দামে দ্রব্য বিক্রয়ের অপরাধে তিন প্রতিষ্ঠানকে ৬৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অপরদিকে বাকেরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা সদর বাস স্ট্যান্ড, খয়রাবাদ বাজার ও বন্দর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৪ জন ব্যবসায়ীকে ৫ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের নেতৃত্বে টরকী বাজার ও গৌরনদী বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ ব্যবসায়ীকে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুষ চন্দ্র দের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে ৪ ব্যবসায়ীকে ১০ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণতি বিশ্বাসের নেতৃত্বে ঈদগাহ বাজার, ধামুরা ও ইচলাদি বাজারে অভিযান চালিয়ে ৫ জন ব্যবসায়ীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মুলাদী নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্রা দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় এক ব্যবসায়ীকে ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়।
বাবুগঞ্জ উপজেলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান খানের নেতৃত্বে বাবুগঞ্জ ও রহমতপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, পেঁয়াজের মূল্য বেশি নেওয়া ও পাটের ব্যাগ ব্যবহার না করায় ৭ প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী রওশন ইসলামের নেতৃত্বে গৈলা বাজারে অভিযান চালিয়ে ৩ ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পাশাপাশি এসব অভিযানে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রান্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি না করা এবং অন্যায্য মুনাফা না করার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) দিনভর অভিযানে বরিশাল নগর এবং জেলার ৫টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম অজিয়র রহমান জানান, জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে করোনাভাইরাস অজুহাতে নোয়াখালীর চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি রুখতে বিভিন্ন হাটবাজারে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় অন্তত ৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনব্যাপী ৫টি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) এ অভিযান পরিচালনা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাজে লাগিয়ে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। এমন সংবাদে বিভিন্ন বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়।
চাটখিল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা কুলসুম মনি জানান, অভিযানকালে চাটখিল পৌরবাজারে চারটি, খিলপাড়া বাজারে চারটি পাইকারি মুদি দোকান, পাল্লা বাজারে দুটি ও দশঘরিয়া বাজারে দুটি দোকানকে ৫৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরোয়ার সালাম জানান, উপজেলার তমরুদ্দি বাজারে অভিযান চালিয়ে চারটি মুদি দোকানকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সেনবাগ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, সেনবাগ পৌর বাজারে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রির অভিযোগে দুটি চালের আড়তদারকে নয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএসএম ইবনুল হাসান জানান, উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের চাল ও পেঁয়াজের ১৮টি আড়ৎকে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত মূল্যে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করায় ১ লাখ ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করায় বসুরহাট পৌরসভার চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, করোনাভাইরাস রোগকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জেলার বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনীসহ বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারগুলোতে অতিরিক্ত দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে। এটা অন্যায়। দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কোন অভাব নেই। যারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম আদায় করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সে লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চলমান থাকবে। অর্থদণ্ডের সাথে অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্কও করা হচ্ছে।
এছাড়া লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় হাট-বাজারে ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করায় ৯ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) দিনগত রাতে উপজেলার হাজিরহাট ও তোরাবগঞ্জ বাজারে অভিযান চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোবারক হোসেন এ জরিমানা করেন।
জানা গেছে, রাতে উপজেলার হাজিরহাট ও তোরাবগঞ্জ বাজারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করায় তোরাবগঞ্জ বাজারের শহিদ স্টোরের মালিককে ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স হাজী করিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিককে ৫০ হাজার টাকা, আরিফ স্টোরের মালিককে ৫০ হাজার টাকা, ইসমাইল ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিককে ৫০ হাজার টাকা, রাকিব স্টোরের মালিককে ৫০ হাজার টাকা, জয়নাল স্টোরের মালিককে ৫০ হাজার টাকা করা হয়। এছাড়া হাজিরহাটের হালিম ট্রেডার্সের মালিককে ৫০ হাজার টাকা, নাহিদ ট্রেডার্সের মালিককে ১০ হাজার টাকা ও একটি মুদি দোকানের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানকালে কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতন উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও মোবারক হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাল, পেঁয়াজ ও আলুসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দিয়েছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ভোগ্যপণ্য বাজার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়