বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০
পথে পথে ঘুরেন তিনি। পথেই কাটে দিনরাত। পথেই তার বসত। পিচঢালা পথে চক, কয়লা আর পোড়া ইট দিয়ে লিখে সাহায্য চান তিনি। কথা বলতে চান না। লিখেই প্রকাশ করেন নিজের আকুতি। নাম জিজ্ঞাসা করলেও বলতে চান না।
তবে দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসার পর বললেন উনার আংশিক নাম প্রভাত। নাটোর সদরে বাড়ি। সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে তিনি এখন শারীরিকভাবে অক্ষম।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ে একসময় রাজশাহী মহানগরীর দেয়ালে দেয়ালে স্লোগান লেখা হতো। বিগত আশি ও নব্বইয়ের দশকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পেত রাজনৈতিক স্লোগান। কিন্তু এখন আর তেমনটি চোখে পড়ে না।
তবে দেয়ালে না লিখে পিচঢালা রাজপথকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। অভিনব পন্থায় পথচারীদের কাছে শৈল্পিকভাবে চাইছেন আর্থিক সহযোগিতা।
রাজশাহী মহানগরীতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রভাতকে দেখা যাচ্ছে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান নিয়ে পথিকের দৃষ্টি কাড়ছেন তিনি।
শনিবার সকালে চক, কয়লা আর পোড়া ইটে রাজশাহী কলেজে ফুটপাতে আনমনে তাকে লিখতে দেখা গেছে। বিভিন্ন মাধ্যমের রঙ ব্যবহার করে শৈল্পিকভাবে লিখেছেন- ‘সাহায্য করুন ক্লান্ত পথিক’। শত শত পথিক মাড়িয়ে যাচ্ছেন সেই পথ।
কেউ কেউ থামছেন। আবার কেউ কেউ সময় নিয়ে উৎসুকভাবে দেখছেন। অনেকে আবার সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
এ সময় লক্ষ্য করা হলো– প্রভাতের শরীরে ময়লা পোশাক। তবে অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে লিখছেন তিনি। ‘সাহায্য করুন, ক্লান্ত পথিক’ বারবার লিখছেন আর মেশাচ্ছেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তার নাম ও ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
দীর্ঘসময় পর একপর্যায়ে জানালেন নাটোর সদরে তার বাড়ি। সড়ক দুর্ঘটনায় তার ডান পা অক্ষম। এ কারণে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘ একযুগ থেকে পথে পথে এভাবে লিখেই চলেন তিনি। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে চাইলেন না। পরিবার, স্ত্রী বা সন্তান বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তার উত্তর না দিয়ে তিনি লিখে চলেছেন।
শনিবার সকালে প্রভাতের সঙ্গে কথা বলতে বলতে রাজশাহী কলেজে ফুটপাতে আরও অনেক পথচারী থেমেছেন। তারা নিবিষ্ট মনে দেখছেন তার কর্মকাণ্ড।
এদের একজন জানালেন, মহানগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে পথে লিখে সাহায্য যান এই ব্যক্তি। গত কয়েক দিন থেকে রাজশাহী মহানগরীতে দেখা যাচ্ছে তাকে। মহানগরীর বিভিন্ন মোড়ে সকাল-বিকাল যাচ্ছেন। অভিনব পন্থায় চাইছেন সবার সহযোগিতা।
তবে প্রভাতের সঙ্গে রয়েছে কয়েকটি পোটলা। দেখে মনে হলো তিনি ভবঘুরে। নাটোরে তার নিজ বাড়িমুখো খুব একটা হয়তো হন না। এখন আছেন রাজশাহী কলেজে ফুটপাতে। দু’এক ঘণ্টা এখানে থেকে হয়তো আবার চলে যাবেন অন্য কোথাও, অন্য স্থানে।
সাহায্য চেয়ে হয়তো এভাবেই পথিকের দৃষ্টি কাড়বেন। এভাবেই চলবে তার জীবন।
স/এমএস
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়