মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১০ ১৪৩১
|| ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২০
রাজশাহীর পবা উপজেলার সরমংলা গ্রামের বাসিন্দা রিনা বেগম। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবার টানাটানির সংসার। তাই ছোটবেলা থেকেই তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো।
এরপর মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তার। একবছর পর কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান, পরের বছরই হঠাৎ তার স্বামী মারা গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।
রিনা গিয়ে আশ্রয় নেন তার ভাইয়ের ঘরের বারান্দায়। এভাবে খোলা জায়গায় থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও উপায় ছিল না তার। অন্যের বাড়িতে, রাস্তায় কাজ করে ভাইয়ের বারান্দায় রাত্রিযাপন করেই চলছিল জীবন। বয়সেই মেয়ের পনের বছর হতেই বিয়ে দিয়ে দেন।
২০১৯ সালে ব্র্যাকের পবার দারুশা শাখার ইউপিজি প্রোগ্রামে রিনাকে সদস্য হিসেবে নির্বাচন করা হয়। সে সময় রিনাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি বকনা গরু পালনের জন্য দেয়া হয়।
এরপর তার ভাইও তাকে আর বাড়িতে রাখতে চান না। তাই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে বাঁধের পাশে এক শতাংশ জায়গা নিয়ে থাকতে শুরু করেন রিনা।
সেখানে নিজের গরুটিও পালতে থাকেন তিনি। কিন্তু শুরু হয় এক নতুন সমস্যা। আশপাশের লোকজন গরু বিক্রি করার জন্য রিনাকে চাপ দিতে থাকে। পরে সামাজিক শক্তি কমিটির মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয়।
কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যরা রিনাকে নিয়ে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেন। চেয়ারম্যান রিনার নিরাপত্তা দেন। রিনা গরু পালন করতে থাকেন।
মাস দুয়েক পর গরুর গোবর বিক্রি করে এবং অন্যের বাড়িতে, রাস্তায় কাজ করার টাকা জমিয়ে পাঁচটি মুরগি কিনেন রিনা। একটি ছাগলও বন্ধক নেন। পরে মুরগি ও ডিম বিক্রি করে হাঁস কেনেন।
ইতিমধ্যে তার গরুটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। গরুর দুধ, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল থেকে তার যে আয় হয় তা থেকে টাকা জমিয়ে কিছুদিন আগে রিনা ১৫ হাজার টাকায় ১৫ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়েছেন।
সেখানে ফসল আবাদ শুরু করেছেন। বর্তমানে ২টি গরু, ১টি ছাগল, ২০টি মুরগি আছে রিনার। বন্ধক নেওয়া ১৫ শতাংশ জমি তো আছেই। এখন আর তার অন্যের বাড়িতে কাজে যেতে হয় না।
নিজের সন্তানের মতো গরু, ছাগল, মুরগির দেখভাল করেন তিনি। রিনা স্বপ্ন দেখেন নিজের একটা সুন্দর বাড়ির। সে লক্ষ্যেই পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সংগ্রামী এই নারী।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়