শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৬ ১৪৩১
|| ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০১৮
বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) রাবার ড্যাম প্রকল্প শুষ্ক নদীর দুই পাড়ের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কৃষকদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এলাকায় এনেছে নান্দনিক সৌন্দর্য। গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের চাষাবাদের বিষয়টি বিবেচনা করে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া এলাকায় বারনই নদীর ওপরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ এ রাবার ড্যাম নির্মাণ করেন। যার সুফল পাচ্ছেন ওই এলাকার কয়েক হাজার কৃষক ও জেলে পরিবার।
বিএমডিএ পুঠিয়া জোনের প্রকৌশল দপ্তর থেকে জানা গেছে, বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বারনই নদীর ওপরে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬২ মিটার রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়। বারনই নদীটি তানোর শিব নদী থেকে সংযুক্ত হয়ে পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া এলাকার মাঝ দিয়ে আত্রাই নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বারনই নদীর দুই পাশের কয়েকটি শাখা নদী বছরের পুরো সময় পানি ভর্তি থাকে। এর ফলে বারনই নদীর পাশের জমিগুলো সেঁচ সুবিধার আওতায় এসেছে। এতে কৃষকরা ড্যামের পানি জমিতে সেঁচ কাজে ব্যবহার করে এক ফসলি জমিতে এখন তিনবার ফসল ফলাচ্ছেন।
অন্যদিকে নদীতে সব সময় পানি থাকায় ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ। ওই এলাকার কয়েক’শ মানুষ মাছ ধরে সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্ন জোগাচ্ছেন। এছাড়া নদীতে পানি থাকায় বারনই নদীর সঙ্গে সংযুক্ত সৈয়দপুর-বিদিরপুর খাল, ফকিন্নি নদী, জোহাখালী নদী, তেবিলি খাল, রায়চাঁদ নদী, মঙ্গলপাড়া গোড়াখালী খালসহ অন্যান্য সংযুক্ত শাখা নদী গুলোতে পানি সংরক্ষণ হচ্ছে। এর ফলে শুধু পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া নয়, দুর্গাপুর উপজেলার অনেক কৃষক নদী থেকে পানি নিয়ে তাদের জমিতে সেঁচ কাজে ব্যবহার করতে পারছেন। বারনই নদীর পার্শ্ববর্তী বিল কুমারী, খয়রার বিল, মরাবিলসহ প্রায় ১৫টি বিলে চাষাবাদ করতে ওই এলাকার কৃষকরা এখন পানি পাচ্ছেন। খরার সময় নদী গুলো শুকিয়ে থাকতো। রাবার ড্যাম স্থাপনের ফলে ওই এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে এসেছে। যার কারনে শুষ্ক মৌসুমওে ওই এলাকার নলকূপ গুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রাবার ড্যামের ওপর কার্লভাট ও সেতু নির্মিত হওয়ায় পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া-জগদিসপুর এবং নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার কাশিয়াবাড়ি এলাকার মানুষের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে রাবার ড্যাম প্রকল্প। বারনই নদীর দুই পাড়ের মানুষ উপকৃত হয়েছে এবং নদীতে প্রচুর মাছ চাষ হচ্ছে। এলাকার কয়েক’শ জেলে পরিবার রাবার ড্যামের ফলে নদীতে জমে থাকা পানিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
বিএমডিএ পুঠিয়া জোনের প্রকৌশলী সেলিম রেজা জানাান, রাবার ড্যাম প্রকল্প শুধু কৃষকদের ভাগ্যই বদলায়নি। ওই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশেও ভারসাম্য এসেছে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে। নদীর দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছপালা থাকায় পাখির কলতানে মুখরিত থাকছে ওই এলাকা। মানুষের জীবনধারা বদলে দেয়া বারনই নদীর রাবার ড্যাম প্রকল্প শুষ্ক মৌসুমে কৃষকদের আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। এই রাবার ড্যামটি পাল্টে দিয়েছে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন। এনেছে কৃষিতে স্বনির্ভরতা।
রবিউল ইসলাম রবি
দুর্গাপুর, রাজশাহী।
তাং- ০২.১১.২০১৮
০১৭১৩৭০৫৯২৫
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়