শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
‘সারা জীবন দুঃখ-কষ্টে গেছে, মানুষের জমিত ঘর করে থাকছি; বান-বর্ষায় বৃষ্টিত ভিজছি। কোনো দিন বাড়ি-ঘরের স্বপন ছিল না।
এখন জমিসহ সেমিপাকা ঘর পাছি। এখন নিজের জমি আছে, ঘর আছে। প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে, ঘর পায়া আমরা খুব খুশি; খোদা তার ভাল করুক’- এভাবেই বলছিলেন পঁয়ষট্টি বছরের বিধবা জায়েদা।
তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু পরে স্বামীকে হারিয়েছেন। ১০ বছর ধরে প্যারালাইসিসে ভুগছেন। ছিল না কোনো সহায়-সম্পত্তি ও মাথা গোঁজার ঠাঁই।
কোনো ছেলে না থাকায় বাধ্য হয়ে বিধবা মেয়ে মাবিয়া বিবির (৪৬) কাছেই থাকতেন। জীবিকার তাগিদে মাবিয়াকে প্রতিদিন রাজশাহী শহরে যেতে হয়, সেখানে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করেন।
শেষ বয়সে এসে অবশেষে জায়েদা ঠাঁই পেয়েছেন রাজশাহী তানোরের সরনজাই ইউনিয়নের তাঁতিহাটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে নির্মিত ঘরে। সেখানে তার সঙ্গে থাকছেন মেয়ে মাবিয়া, মাবিয়ার এক ছেলে, বিধবা মেয়ে আঁখি (২৫) ও নাতিও।
‘দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মুখে হাসি ফোটাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন এমনই অনেক জায়েদা-মাবিয়া-আঁখি। তাঁতিহাটিতে ১৩টি ও নবনবি গ্রামে ঠাঁই পেয়েছেন ১১টি অসহায় পরিবার।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনা টাকায় ঘর উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত ২৩ জানুয়ারি গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত এসব ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন। আশ্রয় পায় হাজারো অসহায় পরিবার।
সরনজাই ইউনিয়নের তাঁতিহাটি আশ্রয়ণে ঘর পাওয়া তালাকপ্রাপ্ত রিপা (৩২) বলেন, পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকি। সেলাইয়ের কাজ করে, ছাগল পালন করে এখন ভালই চলতে পারি। রাতে ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারি, কোনো অসুবিধা হয় না। কারও অত্যাচার সহ্য করতে হয় না।
একই ইউনিয়নের নবনবি গ্রামের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের উপকারভোগী মুন্ড্রি (৫৬) বলেন, প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। জীবনের এতগুলো বছর নিজের বলে কিছু ছিল না।
দিন-মজুর খেটে মানুষের জায়গায় কোনো রকমে ঘর তুলে বসবাস করতাম। এখন ঘর পেয়ে খুব ভাল আছি। অন্তত নিজের বলে তো কিছু একটা আছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন।
এ সময় আশ্রয়ণে ঘর পাওয়া উপকারভোগীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পরিবার পায় ২টি থাকার ঘর, ১টি রান্না ঘর, ১টি করে উন্নত টয়লেট ও স্টোর রুম। প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে চমৎকার পরিবেশে টেকসই করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়