বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২ জানুয়ারি ২০২২
বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের আনন্দের মূল উপলক্ষই হলো নতুন বই। তাই তো স্কুলে স্কুলে ভিড় জমিয়েছে শিক্ষার্থীরা। হাতে বই পাওয়ার পর কেউ নতুন বইয়ের মলাট খুলে দেখছে, কেউ গন্ধ শুঁকছে আবার কেউ বুকে বই নিয়ে ছুটছে এক বন্ধুর কাছ থেকে আরেক বন্ধুর কাছে। স্কুলে স্কুলে বইয়ের গন্ধে মেতেছিল লক্ষ লক্ষ শিশুর প্রাণ। অন্যান্য বছরের মতো বই বিতরণকে কেন্দ্র করে উৎসব না থাকলেও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভেসেছে শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করেছেন আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা।
করোনার প্রভাবে সরকারি নির্দেশনার কারণে এবারও বই উৎসব হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাধারণভাবেই বিতরণ করা হয়েছে বই। কিন্তু বই পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। অনেকেই অভিভাবকের সঙ্গে বহুদিন পর এসেছে প্রাণের স্কুল চত্বরে। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে দেখেছে চিরচেনা স্কুল। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে বই নিচ্ছে। এরপর মাঠের এক কোণে ভিড় জমাচ্ছে। অনেকে মেতে উঠেছে খেলায়। শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে বিতরণ করা হয়েছে বই। অভিভাবকরা স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে আর ভেতরে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে খোশ গল্পে মেতে ওঠে।
বছরের প্রথম দিনই রাজশাহীর পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী নতুন বই পেয়েছে। গতকাল শনিবার স্কুলে স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে। নতুন ক্লাসে উঠে নতুন বছরের প্রথম দিনই নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধাদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বলেন, ‘আমরা সব শ্রেণির শতভাগ বই পেয়েছিলাম। স্বাস্ব্যবিধি মেনে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রথমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই বিতরণ করেছি। এরপর অন্য তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাক-প্রাথমিকের বাচ্চাদের বইগুলো এখনও পাইনি। সেগুলোও দ্রুত পেয়ে যাব বলে আশা করছি।’
রাজশাহী শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবার প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ২০ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬১২ জন, মাধ্যমিকের ১ লাখ ৮৬ হাজার জন এবং প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৯০৬ জন।
প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই একটি করে। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৯৪৫টি। মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫৪৭টি। প্রাথমিকে বইয়ের চাহিদা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮৬২টি। মাধ্যমিকের চাহিদা ৪৮ লাখ ৭১ হাজারটি।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, চাহিদার বিপরীতে আমরা ১১ লাখ ৯০ হাজার বই পেয়েছিলাম। সব বই স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে বছরের প্রথম দিনই বিতরণ করা হয়েছে। সামান্য কিছু বই বিতরণে বাকি আছে। সেগুলোও দ্রুত করা হবে।
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, তারা চাহিদার বিপরীতে কিছু কম বই পেয়েছিলেন। যা পেয়েছিলেন তার সবই বিতরণ করা হয়েছে। এবারও করোনার কারণে অনুষ্ঠান না করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হয়েছে। বাকি থাকা বইগুলোও দ্রুত আসবে। তখন এগুলোও দ্রুত স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
রাজশাহীর নওহাটায় বিনামূল্যে নতুন বই বিতরণ উদ্বোধন করা হয়। নতুন বই হাতে পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১ জানুয়ারি) সকালে নওহাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ও পুঠিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন নওহাটা পৌরসভার মেয়র মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নওহাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রধান শিক্ষক শামসুদ্দিন পরামানিক, পুঠিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান সহ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তাই দেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধুমাত্র বই বিনামূল্যে প্রদান করছেন না। শিক্ষার্থীরা যাতে সুন্দর পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারে সে জন্য তিনি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।
শনিবার সকালে নগরীর বি.বি হিন্দু একাডেমি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বি.বি. হিন্দু একাডেমির প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ সরকার, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জগদিশ চন্দ্র ঘোষ, সহকারি প্রধান শিক্ষক অনল কুমার মন্ডল, সহকারি শিক্ষক দিলীপ কুমার সরকার, সহকারি শিক্ষিকা অঞ্জনা সাহা সহ অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ।
রাজশাহীর বাঘায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার (১ জানুয়ারি) উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই বই বিতরণ করা হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০ ভোকেশনাল বিদ্যালয়, ৭৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২২টি কেজি স্কুল, ব্র্যাক স্কুল ৮টি, ৯টি দাখিল মাদ্রাসাসহ মোট ১৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শিশু শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ওবাইদ জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি বই প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিতরণ করা হবে।
বাঘা উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা জানান, এ বছর করোনার পরবর্তী সময়ে কোন আনুষ্ঠানিক ছাড়াই নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করেন।
মোহনপুরে স্বাস্থ্য বিধির মাধ্যমে কেশরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন বই বিতরণ করা হয়। শনিবার (১জানুয়ারি) সকাল থেকে দিনব্যাপি শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন প্রধান শিক্ষক মুর্শিদা খাতুন। এসময় শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরুত্বে বসা দেখা যায়। অন্যদিকে উপজেলার বাকশিমইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
কেশরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুর্শিদা খাতুন বলেন, করোনা কালিন সরকারি দির্দেশ মেনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয় হচ্ছে। সময় কিছুটা বেশি লাগলেও শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখতে এটি সরকারের ভাল উদ্যোগ।
বই বিতরণ পরিদর্শনকালে উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার আবদুস সামাদ বলেন, শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাস হতে সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বছরের প্রথম দিনেই বই বিতরণ করা হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ করতে পারবেনা। এজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সানওয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের করোনা সুরক্ষা দেয়ার লক্ষে এবছর অনানুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ করা হয়েছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়