শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৬ ১৪৩১
|| ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২১
রাজশাহীর বাঘায় অসময়ে পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অর্ধশত পরিবার বসবাস করছেন। তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এমনকি জমি লিজ নিয়ে ঘর তুলবেন, সেটিও পাচ্ছেন না। নিরুপায় হয়ে তারা খোলা আকাশে নিচে বসবাস করছেন।
সরেজমিন পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর কালীদাসখালী চরে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী নাসরিন বেগম বলেন, আমার চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাসেল আলী স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি ও মেজ ছেলে ইয়ামিন আলী দ্বিতীয় শ্রেণি, লোয়া ছেলে ইমন আলী শিশু শ্রেণিতে পড়ে। সবার ছোট ছেলে আবদুল্লাহ বয়স ছয় মাস। আমার স্বামী আলী আকবর খাঁ কাজের সন্ধানে ঢাকায় গেছেন।
এর মধ্যেই অসময়ে পদ্মার ভাঙনে বাড়িঘর ভেঙে পদ্মাগর্ভে চলে গেছে। আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এমনকি জমিও নেই। আমি চার সন্তান নিয়ে নিরুপায় হয়ে খোলা আকাশে নিচে বসবাস করছি।
এমন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন দিনার আলী খাঁ, আকমল হোসেন, লিটন আলী, আরিফুল ইসলাম, ফুলচান, ছনিয়া, নুর মোহাম্মদ, আব্বাস, সুলতান, আনোয়ার, সাহাজন, হালিম, জাফর, বছির, আলাল, নিতাই চন্দ্র, গুলবার, ছিদ্দিক, ওছির, সবজোপ, রুবেল, হান্নানসহ প্রায় অর্ধশত পরিবার। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ বিষয়ে নুর মোহাম্মদ বলেন, আমার তিন বিঘা জমির ওপর বাড়ি করা ছিল। বাড়ির পশ্চিমে দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের আবাদসহ বাড়িঘর পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমি বাড়ি করার জন্য কোনো জমি লিজ পাচ্ছি না। ফলে নিরুপায় হয়ে পড়েছি। কোনো উপায় না পেয়ে অন্যের জমির ওপর বাড়িঘরের চালা রেখেছি। জমির মালিক সেগুলো সরিয়ে নিতে বলছেন। কথায় যাব কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
৩ নম্বর কালিদাখালী চরের আবদুস সালাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে অনেক ভূমিহীনদের বাড়ি করে দিয়েছেন। আমাদের এই চরে তেমনিভাবে ভূমিহীনদের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করলে, হয়তো নদীভাঙা মানুষগুলো সেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতে পারতেন। নদী ভাঙতে ভাঙতে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
এলাকার রাজ আলী সরকার (৭২) বলেন, একদম পদ্মার ভাঙনের মুখে রয়েছে আমার বাড়ি, যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে। স্ত্রী রুসিয়া বেগম ক্যান্সারে আক্রান্ত। বাড়িঘর নিয়ে কথায় যাব এ চিন্তায় রয়েছি।
তিনি জানান, পাঁচ কাঠা জমি এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে বাড়ি করেছিল রাজ আলী। বর্তমানে জমি লিজ পাচ্ছে না। এই বয়সে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে পড়েছেন মহাবেকায়দায়। তিনি ভাঙনের কারণে ছয়বার বাড়ি স্থানান্তর করেছেন।
এদিকে লিটন আলীকে ভাঙনের ভয়ে বাড়িঘর ভেঙে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। তার বাড়িটা ভাঙনের মুখেই পড়েছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চককালিদাখালী চরের মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ২৬২ জন। পরিবার ছিল চার শতাধিক। এর মধ্যে নদীভাঙনের কারণে ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। বর্তমানে নির্বাচন চলছে।
আমি এই ওয়ার্ডের আবারও মেম্বার পদপ্রার্থী। চলে যাওয়া ভোটারদের খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমি অসহায়দের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করি। নিজের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ও সরকারিভাবে তাদের সবসময় সহায়তা প্রদান করা হয়।
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ এমনভাবে নদীভাঙন দেখা দেবে কল্পনা করতে পারিনি। কিছু মানুষ জমি লিজ না পাওয়ার কারণে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, আমরা নদীভাঙনে নিরুপায়। ভাঙনের কারণে ১০ বছরের ব্যবধানে চার বাড়ি বাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। তবে অসময়ে নদীভাঙনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, অসময়ে পদ্মার ভাঙনের বিষয়ে অবগত আছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করছি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়