বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২০
ছুটির কারণে বাড়িতে এসেছে শহিদুলের ডুয়েট পড়ুয়া ছেলে সজিব। কেউ একজন ছড়িয়ে দিয়েছেন তার ছেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও রাজনৈতিক নেতারা তার বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছেন।
শুধু তাঁর বাড়ি নয়, তার জামাই এবং ভায়রার বাড়িও লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতা খুঁজতে এগিয়ে যান হেলথ প্রোভাইডার আসাদুল।
তিনি জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খবর পেয়ে সেখানে অনুসন্ধানে যাই। সেখানে গিয়ে তাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তারপরেও তারা বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেন না।
গত মঙ্গলবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন রাতে রীতিমতো শহিদুলের বাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়েছে। কে ঢিল ছুড়েছে শহিদুল তা বলতে পারেননি। ভয়ে আতঙ্কে তারা তিন দিন ধরে বাড়ির বাইরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে চুপ করে রয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় একজন মুরগি ব্যবসায়ী। তার জামাই সাইফুল ইসলাম হোমিও চিকিৎসক। একই গ্রামের হাজি পাড়ায় তার বাড়ি।
জানা গেছে, শহিদুল ইসলামের বাড়ির বাইরে একটি মুরগির খাঁচা থাকে। কেউ কিনতে এলে সেখান থেকেই বিক্রি করেন। কেউ একজন ছড়িয়ে দিয়েছেন তার ছেলে করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হয়েছেন। মসজিদের মাইক থেকে চৌকিদার ঘোষণা দিয়েছেন যে শহিদুলের ছেলের করোনা হয়েছে। তারা যেন বাড়ির বাইরে না আসতে পারে। তার বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে কোন খাবার তাদের বাড়িতে দেওয়া হয়নি।
শহিদুল জানান, তার ছেলে ডুয়েটে পড়াশোনা করে। ছুটির কারণে সে বাড়িতে এসেছে। গত মঙ্গলবার তার একটু জ্বর-জ্বর মনে হয়েছিল। এজন্য দিঘা বাজারে একটি ওষুধের দোকানে ওষুধ আনতে গিয়েছিল। তারা আর কিছুই জানেন না। এরপর তার বাড়িতে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতারা এসে বাড়ির ভেতরে থাকার নির্দেশ দেন। তার জামাইয়ের দিঘা বাজারে একটি ওষুধের দোকান আছে। তাকেও বাড়ির বাইরে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার ভায়রার বাড়ি দিঘা পশ্চিমপাড়া। তাকেও বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বাড়ি থেকেই সোনালী মুরগি বিক্রি করেন। গত ১৭ মার্চ থেকে তিনি মুরগী বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ওষুধের দোকান থেকে শুনে এসে একজন স্কুল শিক্ষক তাকে বলেন, শহিদুলের ছেলের নাকি জ্বর। তার করোনাও হতে পারে। এর বাজার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার ভায়রা ও জামাইয়ের বাড়ির লোকজন তাদের বাড়িতে আসার কারণে তাদেরও তিনি বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। খবর নিয়েছেন তাদের বাড়িতে বাজার আছে।
তিনি বলেন, মুঠোফোনে বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানানোর পর সেখান থেকে চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে দেখেছেন। ছেলের জ্বর কম। করোনা হয়নি। ছয়-সাতদিন বাড়ি থেকে বের না হওয়ার জন্য বলেছেন।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা বলেন, ওই মুরগি ব্যবসায়ীর ছেলের জ্বর, সর্দি, কাশি ও আমাশয় হয়েছে বলে স্থানীয় বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান তাকে জানিয়েছেন। এই জন্য তাদের কয়েকদিন বাড়ির বাইরে না আসার জন্য বলা হয়েছে।
বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান, বলেন, তেমন কিছু না। সামান্য একটু গা গরম হয়েছিল। ডাক্তার ডেকে তিনি দেখিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালেও চৌকিদার পাঠিয়ে খবর নিয়েছেন, জ্বর নেই। ছেলেটা গত ১৮ মার্চ ঢাকা থেকে এসেছে। বাইরে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। এ জন্য তিনি বাড়িতেই থাকতে বলেছেন। ঢিল ছোড়ার বিষয়টি শোনেননি বলে জানান তিনি।
স/মা
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়