শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২১
রাজশাহীর বাঘায় দেশি জাতের ছাগল পালনে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। উপজেলার অধিকাংশ বাড়িতেই দেশি জাতের ছাগল পালন করা হয়। তবে এরমধ্যে উপজেলার পদ্মার চরে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছাগল পালন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলায় সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা। গ্রামের সংখ্যা ১২৩টি। সকালের দিকে একটু হাঁটলেই চোখে পড়বে ছাগলের পাল মাঠে মাঠে চরছে। এই ছাগলগুলো অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের।
তবে ছাগল পালনকারীরা বাড়িতে নিজ নিজ কাজ শেষে ছাগল নিয়ে মাঠে চরাতে যায়। এরমধ্যে অসহায় নারীদের মধ্যে ছাগল পালনের আগ্রহ বেশি।
দিঘা গ্রামের রাবিয়া বলেন, ১৫ বছর আগে আমার স্বামী মারা যায়। একটি মেয়ে রেখে যায়। এই মেয়ে ও সংসার চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ি। পরে প্রতিবেশির একজনের সহযোগিতায় প্রথমে একটি মাত্র ছাগল ক্রয় করি।
এখন এই ছাগল থেকে আমার ১৮টি ছাগল হয়েছে। প্রতি বছর ইদ মৌসুমে ছাগগের চাহিদা বেশি হয়। এই সময় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি করি। বর্তমানে এই ছাগল পালন করে সংসারে আর কোনো অভাব অনটন বুঝতে পারি না।
আড়ানী হামিদকুড়া গ্রামের শিহাব আলী বলেন, আমার ১২টি ছাগল আছে। এই ছাগল পালন করে চার কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ঘর দিয়েছি। বর্তমানে সংসারে কোনো অভাব নেই।
চকরাজাপুর চরের সুপিয়া বলেন, স্বামী ১৮ বছর আগে মারা গেছে। দুটি কন্যা সন্তান রেখে মারা যায়। কি করে সংসার চালাব। সিন্ধান্ত নিলাম ভিক্ষা শুরু করব। এই কাজ করলে মানুষ ভাল চোখে দেখবে না।
অবশেষে প্রতিবেশির একটি ছাগল আদি নিলাম। সেই ছাগল থেকে এখন আমার ২১টি ছাগল হয়েছে। এই ছাগল পালন পালন করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে আমি খুবই ভাল আছি।
চকছারী গ্রামের জুগল বাবুর পকুর পাড় এলাকার ছাগল খামারী তারিখ হোসেন বলেন, ছয় মাস আগে ৩০টি দেশি জাতের ছাগল নিয়ে খামার তৈরি করা হয়েছে। টার্গেট নিয়ে এই খামার তৈরি করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ৩০০ টি ছাগল করব। তাহলে বছরে এক হাজার ২০০ বাচ্চা পাব তার দেখাদেখি ১৯টি ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে ।
এই খামারের একটি ছাগল দেড় থেকে দুই বছর পালন করলে ২৫ কেজি থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। তবে দেশি জাতের ছাগলের চাহিদা বেশি। বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা হয় না। কসাইরা খামারে এসে নিয়ে যায়। এছাড়া ইদ মোসুমে বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা এসে ছাগল নিয়ে যায়।
কুশবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, আমি আগে ঘুরে বেড়াতাম। আর বাবার সংসারে খাওয়া দাওয়া করতাম। বাবা বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছে। আমি প্রথমে ২টি ছাগল নিয়ে শুরু করি। বর্তমানে আমার ৪০টি ছোট-বড় ছাগল হয়েছে।
এছাগলের খামার দিয়ে আমার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, বড় মেয়ের কলেজে পড়া ও ছোট ছেলে স্কুলে পড়ার খরচের পাশাপাশি সংসার পরিচালনা করি। কোরবানি ইদের সময় ছাগল বিক্রি করা হয়। তবে তিনি দাবি করেন সরকার বিনা সুদে ঋণ ও সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করলে খাবারকে আরো প্রস্তর করা যেত।
পদ্মার চরের মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, এমনিতেই চরের মানুষ দরিদ্র। নদী ভাঙ্গনের কারণে প্রতি বছর এই চর থেকে আরেক চরে যেতে হয়। শিক্ষার দিক থেকেও পিছিয়ে আছি। ফলে অধিকাংশ পরিবার ছাগল-গরু পালন করে। চরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছাগল আছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলার অধিকাংশ বাড়িতে ছাগল পালন করা হয়। তবে আমরা সব সময় গ্রামে গ্রামে ছাগল সুস্থ রাখার জন্য তদারকি, পরামর্শ প্রজন্নন, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পশিক্ষণ দেয়া হয়। কোরবানির সময়ে দেশি ছাগলের চাহিদা বেশি হয়।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়