বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙছে পদ্মার পাড়। চাপ চাপ মাটি ধসে পড়ে দীর্ঘ হচ্ছে ভাঙনের চিত্র। প্রায় ৪ কিলেমিটার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতশত একর জমিসহ গাছপালা ঘরবাড়ি।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার মধ্যে কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর চরের দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় হারিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে লক্ষীনগর স্কুলসহ আরো শতাধিক বাড়ি।
জানা যায়, চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর চরের মানুষ ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং হুমকির মধ্যে রয়েছে শতাধিক পরিবার ও লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে ভাঙন থেকে ১৫০ মিটার দূরে রয়েছে স্কুল ভবনটি। এছাড়া কালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অন্যাত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার (৩ নম্বর কালিদাসখালী চর) শহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ থেকে আবারও নতুন করে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ভাঙন।
যে সমস্ত জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে, তার সিংহ ভাগ জমিতে ছিল আম, খেজুর গাছ ও বাড়িঘর। এবার ভাঙনের কবলে আমার ১০ বিঘা নিজস্ব জমিসহ আম বাগান বিলীন হয়ে গেছে।
৩ নম্বর কালিদাসখালী চর ও চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমার ১৫ বিঘা আম বাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এমনকি আমার বাড়িটাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙন থেকে মাত্র ৬০ মিটার দূরে রয়েছে বাড়ি। নতুনভাবে আবারও যে ভঙনের ডাক তাতে মনে হয় কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর বলে কোনো চিহ্ন থাকবে না।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার ফজলুল হক বলেন, চকরাজাপুর বলে কোনো চিহ্ন নেই। ইতোমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। এই ওয়ার্ডের চার ভাগের তিন ভাগ ইতোমধ্যেই পদ্মাগর্ভে চলে গেছে। নতুনভাবে যে হারে ভাঙা শুরু হয়েছে, এভাবে ভাঙতে থাকলে আর কিছু দিনের মধ্যে এই ওয়ার্ডও বিলীন হয়ে যাবে।
এদিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার শিকদার বলেন, আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডের কোনো চিহ্ন নেই। এই ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।
কালিদাসখালী চরের রতন আলীর স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আমার মাত্র ১০ কাঠা জমি ছিল। তাও ভাঙনে চলে গেল। দুই সন্তান নিয়ে কী করে চলবো, কোথায় যাবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। তার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
সে নিঃশ্ব হয়ে গেছে, ঘর তোলার জমিও নেই, টাকাও নেই। ছোট এক শিশুকে পাশে রেখে বাড়ির মালামাল গুছিয়ে স্বামী রতন আলীর মাথায় তুলে দিচ্ছেলেন।
এদিকে কয়েক বছরে ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, বসত ভিটা, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিজিবি ক্যাম্প, মসজিদ।
বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এই সব পরিবারের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসত বাড়ি গড়ে তুলে বসবাস করছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। তবে বর্তমানের ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা বলেন, পদ্মার ভাঙনের খবর পেয়ে সরেজমিন তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়