বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৪ ১৪৩১
|| ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২১
আজ ১২ এপ্রিল, সোমবার বিড়ালদহ-মাইপাড়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মাইপাড়া লোহার ব্রীজ থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। চলে দুপুর ২টায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ওই গণহত্যায় স্থানীয়দের তথ্যমতে প্রায় ২৮০-৩০০ জন শহীদ হয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে ১১৮ জনের নাম তালিকা রয়েছে।
ওই এলাকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহিদদের মধ্যে অধিকাংশরা ছিল বহিরাগত ও অপরিচিত। হানাদার বাহিনীরা শহিদদের লাশগুলোতে অগ্নিসংযোগে পুড়িয়ে দেয়ায় সকলের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। এদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলেও উপজেলার বিহারীপাড়ার গণকবরটি আজও জরাজীর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।
উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি শরিফ কাজী বলেন, ১৯৭১ সালে আমার বয়স তখন ১৪ বছর। আমি ৮ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করি। ১২ এপ্রিল ঠিক দুপুর দুটার দিকে পাক হানাদার বাহিনীর লোজকন দেশিয় দোসরদের সহযোগিতায় মাইপাড়া (পূর্বে সেখানে লোহার ব্রীজ ছিল) কালুসার পুকুরপাড় এলাকা থেকে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সাজোঁয়াযান সেল নিয়ে দলে দলে পাক বাহিনী বিড়ালদহ এলাকায় আসতে শুরু করে। বৃষ্টির মত গুলি আর মটারশেলের আঘাতে স্তব্দ হয়ে যায় চারপাশ। মুহুর্তের মধ্যে এলাকা জুড়ে অগ্নিকাণ্ডের ধোয়া আর পোড়া গন্ধে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
আমরা এদিক সেদিক ছুটাছুটি করে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছি। অনেকই পালিয়ে পদ্মার ধারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। শুনেছি সেখানেও পাক বাহিনীরা হত্যার তান্ডব চালিয়েছে। সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে থেমে যায় গুলির আওয়াজ।
এরই মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে লাশ আর লাশ। পাক বাহিনীরা কোথাও কোথাও লাশের স্তুপ করে অগ্নিসংযোগ করেছে। ওই রাতে কিছু পাক সেনারা রাজশাহী শহরের দিকে চলে যায়। এর মধ্যে অনেক পাকসেনা আমার দাদা শহীদ আব্দুল হাসিবের বাড়িতে রাত্রিযাপন করে সকালে তারা চারঘাটের দিকে চলে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বাদশা বলেন, ১২ এপ্রিল আমাদের জন্য একটি মর্মান্তিক দিন ছিল। বিড়ালদহের চারিদিক থেকে পাক বাহিনীরা ঘিরে ফেলে। গুলি ও সেলের আঘাতের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা ওইদিন পিছু হটতে বাধ্য হন। আর পাক বাহিনীরা পুরো এলাকা জুড়ে গণহত্যা আর অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে।
সেদিন তাদের হাত থেকে পশু-পাখিও রেহায় পায়নি। বাতাসে চারদিক শুধু পোড়া লাশের দুগন্ধে ভেসে আসে। ঘটনার দু’দিন পর বেঁচে থাকা লোকজন এলাকায় আসতে শুরু করেন। তারা নিজেদের পরিচিত শহীদদের সনাক্ত করে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করেছেন।
আবার অনেকের চেহারা বীভৎস হওয়ায় তাদের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। সে কারণে তাদের একত্রিত করে বিভিন্ন জঙ্গলের ফাঁকা স্থানে মাটিতে পুতে রাখা হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে ১১৮ জনের নাম তালিকা থাকলেও ওইদিন কমপক্ষে ২৮০ থেকে ৩০০ জন শহীদ হয়েছিলেন।
বিড়ালদহ এলাকার আবু হানিফ বলেন, স্বাধিনতার ৫০ বছর পূণ হয়ে গেলো। কিন্তু বিহারীপাড়া এলাকার গণকবরটি আজও জরাজীর্ন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। ওই হত্যাযজ্ঞে সাবেক সাংসদের দাদাও শহীদ হোন। তিনি টানা ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। অথচ তিনি ওই গণকবরটি সংরক্ষিত করেননি। তবে তিনি গত ৬ বছর আগে বিড়ালদহ মাজারের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেল ভরাট করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছেন।
বানেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজি সুলতান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর হয়ে গেলো। কিন্তু বিহারীপাড়া এলাকায় গণকবরটির আজও সঠিক মূল্যোয়ন করা হয়নি। তবে বিড়ালদহ গণহত্যায় শহীদদের নামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
১২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওইদিন ছোট বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউ পাক বাহিনীর হাত থেকে রেহায় পায়নি। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মানুষের বাড়িঘর গরু-ছাগল। ধ্বংসযজ্ঞ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল শত শত মানুষের দেহবাশেষ। কয়েকদিন পর্যন্ত ওই শহিদদের লাশ গুলো শিয়াল-কুকুরে খেয়েছে। আবার কোথাও কোথাও লাশের স্তুপে পাক বাহিনীরা ডিজেল-পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়