শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২২
এখন থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে রাজশাহীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল ঢোপকলের মাধ্যমে। সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল শহরের ৯৯টি ঢোপকল। এ কালে এসে শহরের রাস্তা সম্প্রসারণের কারণে ঢোপকলগুলোর উচ্ছেদ চলছে।
সবশেষ গত সোমবার নগরীর ফুদকিপাড়া এলাকা সুরেশ স্মৃতি সড়কের পাশের ঢোপকলটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই ঢোপকলটি এখনও সচল ছিল। পাইপলাইনের মাধ্যমে রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) পানি আসত। এভাবে একের পর এক ভেঙে ফেলায় শহরে ঢোপকলের সংখ্যা কমে প্রায় ১৫টিতে নেমেছে।
জানা গেছে, রায় ডিএন দাশগুপ্ত ১৯৩৪ সালে রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। তখন ডায়রিয়া ও কলেরায় রাজশাহীতে অনেকের মৃত্যু হচ্ছিল। এই সংকট সমাধানে চেয়ারম্যান শহরে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়ার কাজে হাত দেন। এতে সহায়তা করে ‘রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি জনকল্যাণমূলক সংগঠন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংগঠনটি রাজশাহীর দানশীল ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তার আহ্বান জানায়। সে সময় রাজশাহীর পুঠিয়ার মহারাণী ছিলেন হেমন্তকুমারী। উদ্যোগের কথা শুনে মহারাণী একাই দান করেন ৬৫ হাজার টাকা।
স্থাপন করা হয় একটি পানি শোধনাগার। এখান থেকে তখনকার ছোট্ট শহরটির মোড়ে মোড়ে পানি পৌঁছে দিতে পশ্চিমে কোর্ট, পূর্বে রামচন্দ্রপুর, পদ্মার পাড় এবং গৌরহাঙ্গা পর্যন্ত এলাকায় স্থাপন করা হয় ৯৯টি ঢোপকল। উড়িষ্যা থেকে রাজমিস্ত্রি এনে নগরীর পাঁচআনী মাঠে তৈরি করা হয় সিমেন্টের ঢোপকলগুলো। প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র আনা হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। ঢোপকলগুলোর উচ্চতা ১২ ফুট, ব্যস চার ফুট। পানির ধারণক্ষমতা ৪৭০ গ্যালন। ঢোপকলগুলোর প্রতিটিই ছিল একটি ‘রাফিং ফিল্টার’। স্থাপনের সময় সারাদিনে মাত্র দুই ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হত। এ জন্য প্রতিটি ঢোপকলকে পানি রিজার্ভ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হত। ফলে সারাদিনই পানি পাওয়া যেত।
আগের শোধনাগার ছেড়ে ঢোপকলগুলোকে ওয়াসার পাইপলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে খাপ না খাওয়ায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন এই ঢোপকলগুলির বেশির ভাগই ভেঙে ফেলেছে। পুরনো স্থান থেকে তুলে কিছু কিছু ‘মৃত’ ঢোপকল রাস্তার পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে শুধু দেখার জন্য।
ফুদকিপাড়া এলাকার ঢোপকলটি ভেঙে ফেলার পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এক সময় মহামারীতে জীবন রক্ষাকারী এই ঢোপকলের ওপরের অংশটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। নিচের অংশ এখনো রয়েছে। নিচের অংশ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি বললেন, ঢোপকলটি এখনও সচল ছিল। মানুষ এখান থেকে পানি নিত। সেটা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী শাখার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন বলেন, ‘ঐতিহ্যের ঢোপকলগুলো ভেঙে ফেলা সাংস্কৃতিক অপরাধ। পৃথিবীর অন্যান্য শহরে এ ধরনের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য অর্থ খরচ করা হয়। রক্ষা করা হয়। আর আমরা ভাঙছি।’
তবে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ বলেন, ‘একটা সময় এটার প্রয়োজন ছিল। এখন নেই। এখনকার যুগের সাথে ঢোপকলগুলো আর চলে না।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়