শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২৩
রাজশাহী মোহনপুরে বাণিজ্যিক মাছ চাষের মতো উন্মুক্ত মগরা বিলের মিঠা পানির মাছ চাষে হাজারো মানুষের ভাগ্য খুলেছে। একদিকে অসংখ্য মৎসজীবীর কর্মসংস্থান হয়েছে। অন্যদিকে বিনামূল্যে সেচ সুবিধায় ফসল ফলিয়ে কৃষকের আয় বেড়েছে বহুগুন।
সরেজমিন জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার উত্তর সীমান্তবর্তী ২০টি গ্রামের নিচু জমির সমন্বয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে মগরা বিল অবস্থিত। নান্দনিক ফসলের বৈচিত্রে ফসলে ভরা বিলটি যেন মনোরম পরিবেশে ভরা। প্রায় ২০ হেক্টর জমি জুড়ে গড়ে ওঠা বিলটি পানবরজ, কলা বাগান, ধান, গম, সবজি ও সারি সারি পুকুরে নান্দনিক রূপে পরিপূর্ণ বিলটিকে কেশরহাট-ভবানীগঞ্জ সড়ক দু’ভাগে বিভক্ত করেছে।
স্থানীয়দের মতে, ৭০ দশকের পর হতে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণের অভাবে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বন্যায় শত শত একর জমির ফসলহানি হতো। ফসল চাষে লোকসান গুণতে গুণতে কৃষকরা ফসলের চাষাবাদ অনেকটাই বন্ধ করে দেয়। বিলে প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মায় উন্নত মানের ঘাস। স্থানীয়রা জীবন জীবিকার কারণে গরু পালন শুরু করে। আর গো-খাদ্যের যোগান দিত এসব ঘাস। তবে এ অঞ্চলের মানুষের সংকট দেখা দেয়।
অবশেষে ৯০ দশকের দিকে কৃষক ও মৎস্যজীবী সংগঠনের উদ্যোগে বিলে বন্যার পানি প্রবেশ স্থলে একটি মিনি স্লুইচগেইট নির্মাণ করা হয়। এর পর হতে বিলের নিচু জমির উন্মুক্ত স্থানে চলছে মাছচাষ এবং উঁচু জমি ফলছে সোনালী ফসল। ফলে অকেজো পড়ে থাকেনা সামান্যতম জমি। নিচু জমিতে চলছে মাছের চাষ এবং উঁচু জমিতে চলছে ধান এবং পানের চাষ। কৃষকের ফসলের জমিতে সেচ দিতে গভীর নলকূপ, পাওয়ার পাম্পসহ সকল ধরনের সেচ যন্ত্রেও ব্যয় বহন কমে আসছে মৎস্যজীবী সংগঠন। উন্মুক্ত বিলে মাছ চাষকে ঘিরে এ অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য খুলে যায়।
১ এপ্রিল শনিবার বিকেলে মোহনপুর উপজেলার প্রসিদ্ধ বিল ঘুরে দেখা গেছে, বিলটি প্রাকৃতিক বৈচিত্রয় এবং মনমুগ্ধকর। বিশাল বিলের চারপাশ জুড়ে রয়েছে ১৯টি সাজানো গোছানো গ্রাম। বিলের ঠিক মধ্যভাগে গড়ে উঠেছে ছিন্নমুল মানুষদের বসতি। যার নাম ইসলাবাড়ী আশ্রায়ণ প্রকল্প। সে গ্রামে যাওয়ার প্রধান রাস্তাটি সারি সারি তালগাছে ঘেরা। বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষের জন্য রয়েছে অসংখ্য পুকুর-দীঘি। এখান থেকে প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে জীবন্ত মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করা হচ্ছে। রফতানি যোগ্য মাছগুলোকে তরতাজা রাখার জন্য বিলের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে বরফ কল। সব মিলে মৎস্যজীবী সংগঠনের উদ্যোগে মগরা বিলে (বিরশা) মাছ চাষকে ঘিরে জেলে, কৃষকসহ অনেক বেকারের ঘরে এখন সুদিন ফিরেছে।
মোহনপুর উপজেলার বিষহারা গ্রামের কছিম উদ্দিন, কমল সরকার, মালিদহ গ্রামের জমির উদ্দিন, কেশরহাট পৌরসভার হারিদাগাছি গ্রামের উমর আলী এবং গোপইল গ্রামের আবদুল জব্বাসহ অনেক কৃষকদের সঙ্গে। একই ধরনের মতামত প্রকাশ করে জানান, প্রসিদ্ধ মগরাবিলে এক সময় শুধু ফসলহানিই হতো। প্রতিবছর বন্যায় ফসলহানি হতো বলে স্থানীয় কৃষকরা ফসল চাষাবাদে বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন। শুরু করে গরু পালন। অবশেষে স্থানীয় একাধিক মৎসজীবী সংগঠনের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত মিনি স্লুইচ গেইট স্থাপনের পর বিলে এখন যেন সোনা ফলছে। নিচু জমিতে হচ্ছে উন্নতজাতের মাছের চাষ। উঁচু জমিতে মৎস্যজীবী সংগঠনের ভর্তুকির টাকায় আউশ, আমন, বোরোধান, পটল, পানবরজসহ ফলছে এখন রকমারি ফসল।
জানতে চাইলে কেশরহাট পৌর এলাকার মালিদহ মস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান বলেন, আমরা সমিতির মাধ্যমে মগরা বিলের খোলা স্থানে মাছচাষ করছি। এতে মৎস্যজীবীদের সংসার চলছে। স্লুইচ গেইট নির্মাণের পর ফসল এবং মাছ চাষ করে শত শত পরিবার উপকৃত হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে স্লুইচ গেইট নির্মাণের ফলে সর্বসাধারণ সুফল ভোগ করছেন। কৃষকরা পান বরজসহ নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে কোটি কোটি অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
মগরা বিল মৎস্যজীবী সংগঠনের পরিচালক মোস্তাফিজুর জানান, বিলটি মূলত কৃষক এবং মৎসজীবী সংঠনের উদ্যোগে ভাল ভাবে চলে। সংগঠনের মধ্যে বিশৃঙ্খলা যেন না হয় সেজন্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে, তাই আমি সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য তদারকী করে থাকি।
এ বিলটিতে আমারও কিছু জমি রয়েছে। অন্য কৃষকরা যেমন সুবিধা পায় জমির মালিক হিসেবে আমাকেও তারা ততটুকু সুবিধা দেয়। কৃষকদের স্বার্থে ভাল ভাবে সংগঠনটি পরিচালনার চেষ্টা করি। তবে সকলের সহযোগিতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এসব সংগঠনের মাধ্যমে বিলটিতে মাছের চাষ হচ্ছে। ফলে মৎসজীবীদের পাশাপাশি সর্বসাধারণ সুফল ভোগ করছে বলেও দাবী করেন তিনি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়