বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১১ ১৪৩১
|| ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২১
রাজশাহীর মোহনপুরে উন্মুক্ত মগরা বিলে মিঠা পানিতে মাছচাষের ফলে ভাগ্য খুলেছে হাজারো মানুষের। আগে বন্যায় তলিয়ে যেত ধান-পানসহ রকমারি ফসল। এখন বিলের চারপাশ জুড়ে ফলছে টাকার ফসল পান। কৃষকরা বোরোচাষে পাচ্ছে ভুর্তুকি। বেড়েছে মৎসজীবীসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠির রোজগার ক্ষমতা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার উত্তর সীমান্তের ২০ টি গ্রামের নিচু জমির সমন্বয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে মগরা বিল অবস্থিত। এ বিলটি নান্দনিক ফসলের বৈচিত্রে ভরা। যেদিক দুচোখ যায় শুধু ফসলে ভরা। বিলের মাঝ ভাগের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে কেশরহাট-ভবানীগঞ্জ সড়ক। এজন্য মগরা বিলটি সবুজে ভরা ফসলের মাঠ হিসেবে পুরনো পরিচিত রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, এ বিলের অতীত ঐতিহ্য ছিল মধ্যে ছিল প্রাকৃতিক নিয়ে উড়ির ঘাস উৎপাদন। ফসল ফলত না একেবারেই। তাই এখানকার মানুষগুলো খাবার সংকটে ছিল। কর্মক্ষেত্র ছিল বলে বিলে গরু চরানো একমাত্র কর্মসংস্থানের উৎস।
সময়ের বিবর্তণে সম্পূর্ণ বদলে যায় বিলটির পুরাতন বৈশিষ্ট। কৃষকরা উঁচু জমির শর কাশিয়া সরিয়ে শুরু করে ইরি ধানের চাষ আর নিচু জমিতে মাছের চাষ আরম্ভ করে। আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে থাকে উড়িঘাস।
কৃষকরা ধানচাষে আগ্রহী হতে থাকলেও প্রতি বছর বর্ষাকালে বন্যায় তলিয়ে যেত প্রায় ১০ হেক্টর জমির চাষকৃত আউশ ধান। বছরের পর পর লোকসান গুণতে গিয়ে তারা আরো দায় দেনায় পড়ে হারাতো হালের বলদসহ ভিটাবাড়ি। অবশেষে স্থানীয় কৃষকরা বন্যা হতে তাদের চাষকৃত মাছ ও ধান ক্ষেত রক্ষায় চাঁদাহারি তুলে তৈরি করে একটি মিনি স্লুইচ গেইট।
স্লইচ গেইট তৈরির পর থেকে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য খুলে যায়। পড়ে থাকে না আর কোনো জমি। বন্যার পানি ঢুকে না বলে সৃষ্টি হয়েছে রোজগারের প্রধান তিনটি উৎস।
একই সঙ্গে নিঁচু জমিতে চলছে মাছের চাষ, মাঝারি নিচু জমিতে দুই মৌসুমের বোরোচাষ এবং উঁচু জমিতে পান বরজের চাষ। এছাড়াও বিলের মাছ চাষ সংগঠন কৃষকদের দিচ্ছে সেচ সুবিধা। এক সঙ্গে তিনটি উৎসের আয় থেকে স্বালম্বি হয়েছে হাজারো কৃষক পরিবার।
গত শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেলে আলোচিত বিলটি ঘুরে দেখা যায়, প্রাকৃতিক নিয়মে বিলটির বৈচিত্র মন মুগ্ধকর। বিশাল এ বিলের চারপাশে রয়েছে সাজানো প্রায় ১৯টির মতো গ্রাম। বিলের মাঝখানে রয়েছে দ্বীপের মতো জায়গায় ইশলাবাড়ী (ইশলাবাড়ী আশ্রায়ণ) গ্রাম। কেশরহাট-ভবানিগঞ্জ সড়ক বিলটিকে দু ভাগে বিভক্ত করেছে।
রাস্তার দুধারে রয়েছে সারি সারি তালগাছ। বাণিজ্যিক ভাবে মাছচাষের জন্য রয়েছে অশংখ্য পুকুর দীঘি। এখান ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে জীবন্ত মাছ রপ্তানির জন্য বিলের মধ্যে গড়ে উঠেছে বরফ মিলসহ পাকৃতিক পানি কৃত্রিম উপায়ে সরবরাহের সুব্যবস্থা।
কথা বলা হয় মগরা বিলের প্রধান সারির কয়েক জন কৃষকদের সঙ্গে, তাদের মধ্যে মোহনপুর উপজেলার বিষহারা গ্রামের কছিম উদ্দিন, কমল সরকার, মালিদহ গ্রামের জমিউদ্দিন, হারিদাগাছি গ্রামের উমর আলী এবং গোপইল গ্রামের আবদুল জব্বারের সঙ্গে। তারা সকলেই একই ধরণের মত প্রকাশ করে বলেন আগে এ বিলে আবাদ হতোনা।
বিলের তলায় মাছ এবং কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য মৎসজীবি সংগঠনের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত মিনি স্লুইচ গেইট দেয়ার পর হতে বিলে যেন সোনা ফলছে।
বিলে আমাদের ধানচাষের জন্য গভীর নলকূপের বিদ্যুত চালায় মগরা বিল মৎসজীবি সংগঠন। সবমিলে মগরা বিলে মাছ চাষ হাজারো কৃষককে স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
মালিদহ মস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান বলেন, আমরা সমিতির মাধ্যমে খোলা স্থানে মাছচাষ করছি। এতে আমাদের সংসার চলছে এবং আমাদের পাশাপাশি হাজার হাজার কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।
আমরা নিজস্ব অর্থানে স্লুইচ গেইট নির্মাণ করেছি। যার সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা। তাদের ধান রক্ষার পাশাপাশি পান বরজ রক্ষা পাচ্ছে। এতে কোটি কোটি আয় হচ্ছে সর্বসাধারণের।
এমনকি কৃষকরা যে বোরোধান চাষ করে গভীর নলকূপের বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে একাধিক মস্যজীবি সংগঠন। সর্বপরি মাছচাষ ঘিরে সফলতার মুখ দেখছে হাজারো কৃষকরা।
জানতে চাইলে মগরা বিল মৎস্যজীবি সংগঠন পরিচালনাকারি মুস্তাক আহমে¥দ জানান, বিলটি মুলত কৃষক এবং মৎসজীবি সংঠনের উদ্যোগে ভালভাবে চলে। সংগঠনের মধ্যে যেন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আমাকে তারা পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে।
বিলটিতে আমারও কিছু জমি রয়েছে। কৃষকদের স্বার্থে ভাল ভাবে সংগঠনটি পরিচালনার চেষ্ঠা করি। তবে খুব আন্তরিকতার সাথেই সংগঠনটি চলছে এবং আমাগীতেও চলবে বলে আশাবাদী তিনি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়