বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২২
রাজশাহী অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। এই পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। দেশে গ্রীষ্মকালে পেঁয়াজের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। ফলে দামও বৃদ্ধি পায়। একই সাথে ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমাদানিও করতে হয়।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদন করতেই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে।
এরফলে আবহাওয়ার নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে এই গ্রীষ্মকালীন আবাদ। আগাম এই পেঁয়াজ চাষে কৃষককে সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। নভেম্বর মাস থেকেই পেঁয়াজ তোলা যায় বলে আবাদের এ নতুন ধারায় দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটাই দূর হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সাধারণত চাষিরা পেঁয়াজের চারা রোপণ করে থাকেন। তখন চাষি বাম্পার ফলন পেলেও দাম কম পেয়ে থাকেন। এজন্য খরিপ-২ এ অসময়ে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চারা উৎপাদন করে বাজার-ঘাটতি রোধকল্পে এবং চাষিদের লাভবান করার লক্ষ্যে চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে।
পেঁয়াজের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও ঘাটতি মেটাতে এবং উৎপাদন বাড়াতে এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চারা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। আর গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ চাষে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের মাঝে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের নমুনা হার্ভেস্টে দেখা যায়, পেঁয়াজ এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন হেক্টর প্রতি প্রায় ১৯ মেট্রিক টন। রাজশাহী জেলায় এবার ২৬৬ হেক্টর জমিতে নতুন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ এন-৫৩ সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। এ বছর রাজশাহী জেলায় দুই হাজার কৃষক প্রায় ২৬৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছেন।
সরেজমিনে বুধবার (৩১ আগস্ট) পবা উপজেলার উজিড়পুকুর, মাড়িয়া, পান্থাপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই এলাকার কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলার পবা উপজেলার উজিরপুকুর গ্রামের কৃষক নাজির উদ্দিন বলেন, পবা উপজেলায় শীতকালে ব্যাপক পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে সময়, চাহিদা ও দাম না পাওয়ায় চাষিকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। গত বছর তিনি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলন ও ভালো দাম পেয়েছেন। তাই তিনি এবার ১ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে করেছেন। ওই জমিতেই পরে আবার শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
পবা উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, তিনি ৫ বিঘা পেঁয়াজ এন-৫৩ চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এ পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকি কম। নভেম্বর থেকেই এ পেঁয়াজ তোলা যায় বলে তিনি জানান। ফলে সারা বছর পেঁয়াজ চাষ ও সংরক্ষণ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
পবা উপজেলার পান্থাপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি নজরুল ইসলাম জানান, ১ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছেন। ৯৫ থেকে ১১০ দিনে বিঘায় ১২০ থেকে ১৫০ মণ উৎপাদন হয়। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, গ্রীষ্মকালীন চারা উৎপাদন প্রক্রিয়া ও কলাকৌশল কিছুটা জটিল। তবে পবা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে আদর্শ চাষিদের মাঝে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করে ভালো ফলাফল পাচ্ছে। এছাড়াও গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ চাষ প্রকল্পের আওতায় জেলার দুই হাজার কৃষককে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ বিষয়ক কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, জেলায় বিভিন্ন চাষির মাধ্যমে ২৬৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ এন-৫৩ আবাদ করা হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে রাজশাহী জেলার কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তনের এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। লাভ ও ফলনে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে।
তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে কৃষি মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কৃষকদের প্রণোদনাসহ করণীয় নির্ধারণ করে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ প্রকল্পের আওতায় জেলায় দুই হাজার কৃষককে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ বিষয়ক কারিগরি প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনূকল হওয়ায় এ পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকি কম। নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির মাঝামাঝি খেত থেকে এ পেঁয়াজ ওঠানো যায়।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়