বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৫ ১৪৩১
|| ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২০
রাজশাহী অঞ্চলে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। দিনের বেলা রোদের রাজত্ব শেষে বিকেল হলেই বদলে যাচ্ছে তাপমাত্রা। কুয়াশার সঙ্গে শীতের রেশ বেশ আঁচ করা যাচ্ছে। গত শনিবার থেকেই রাজশাহী ও আশপাশের অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রোববার ও সোমবারেও তা অব্যাহত রয়েছে। এর আগে শনিবার রাজশাহীতে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে, পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে।
আবহওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত রোববার (২০ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬ টায় বাতাসের আদ্রাতা ছিলো ৮৯ শতাংশ এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ৮৪ শতাংশ। সাধারণত দিনের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আরও এক-দুদিন এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, শীতের তিব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বেড়েছে। সেই বিষয়ে জানাচ্ছেন, সোনার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জে হঠাৎ করে হিমেল বাতাস ও কনকনে ঠান্ডায় দুঃস্থ ও ছিন্নমুল মানুষরা পড়েছে কষ্টের মধ্যে। শীতের প্রকপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম পোশাক কেনায় ভিড় বাড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে ফুটপাতের ভাসমান কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার
মানুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে কুয়াশা তেমন না থাকলেও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেট এবং বিভিন্ন স্থানে ভাসমান ভ্যানে করে পুরনো কাপড় বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্য করা গেছে, ফুটপাতের দোকানগুলোতে সস্তায় বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন। পুরনো গেঞ্জি, সোয়েটার, হাতা ও পা মোজা, টুপি, উলের চাদর, কম্বল ইত্যাদি কেনাবেচা হচ্ছে। ছোট বড় সব ধরনের শীতের পোশাক
পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে। ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন সাইজের কাপড়ের জ্যাকেট ও মোটা সোয়েটার বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা শহরের ফুটপাতে শীতের গরম কাপড় কিনতে আসা দম্পতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, কম দামে শীতের গরম কাপড় কিনতে তারা ফুটপাতের দোকানে এসেছেন। শীতের প্রায় সবধরনের পোশাক এখানে আছে। ফুটপাতের গরম কাপড় বিক্রেতা কামাল ও রমজান আলী বলেন, তারা ঢাকা থেকে শীতের পুরনো কাপড় ক্রয় করেন। কিছুটা কমদামে ভালমানের এসব শীতের পোশাক বিক্রি করতে পারছেন তারা। শীতের প্রকোপ বাড়ায় তুলনামূলকভাবে তাদের পোশাক বিক্রি বেড়েছে। এতে করে তাদের বাড়তি আয় হচ্ছে।
এ ছাড়া, শীতের প্রকোপ বাড়ায় গবাদিপশুর গায়েও দেয়া হচ্ছে পাটের চট অথবা পুরোনো গরম কাপড়। জেলায় আবহাওয়া দপ্তর না থাকলেও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীতে আরো কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। চলতি বছরে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা ঠা-া বাতাসে শীত বেশি অনুভব হচ্ছে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজ রায়হান জানান, পৌষ মাস শুরু হওয়ায় শীত পড়তে শুরু করেছে। শীতের সময় এমনিতেই ভাইরাসজনিত রোগ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগিসহ তাদের সাথে অন্যান্যদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ কে এম তাজকির-উজ-জামান জানান, ইতোমধ্যে জেলার ৪৫ টি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভান্ডার হতে প্রাপ্ত ২০ হাজার কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে শীতার্তদের জন্য কম্বল কেনার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা চাহিদাপত্র ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরে প্রেরণ এবং অন্যান্য উপজেলার জন্য অতিরিক্ত কম্বল বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ও বাঘা তেঁতুলতলা হাটে পুরাতন কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের আগ্রহ যেন একটু বেশি। এর মূল কারণই হলো এখানকার কাপড়ের দাম কম। এ কারণেই নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। ১৫ থেকে ২০ জন ব্যবসায়ী এখানে কাপড় বিক্রি করেন। বানিয়াপাড়া এলাকার নি¤œ আয়ের ক্রেতা ইয়ার আলী জানান, আমরা দিন আনি দিন খায়। আমাদের মতো গরীব মানুষ শীতে গরম কাপড় কিনতে পারেনা। তাই ছেলে-মেয়েদের
নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করতে হয়। ফলে অনেকটা সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাই ফুটপাতের দোকানে বাচ্চাদের জন্য কিছু গরম কাপড় ক্রয় করছি। আড়ানী হাটে পুরাতন কাপড় বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এ বছর কয়েক লট মাল আনা হয়েছে। ভাল বিক্রিও হয়েছে। ক্রেতারা প্রচুর আসছে। কোন কোন লটে অনেক ভাল কাপড় থাকে। সেই ভাল কাপড় খুঁজে নিতে ক্রেতাদের থাকে বাড়তি আগ্রহ।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পুরাতন কাপড়ের হাট বসছে। এখান থেকে নিন্ম বিত্ত মানুষরা গরম কাপড় কিনছেন। গরীব মানুষদের শীত নিবারণে এসব দোকানগুলো বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়