শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
রাজশাহীতে ক্রমায়ন্বয়ে বাড়ছে মানসিক রোগির সংখ্যা। অনুসন্ধানে জানা গেছে সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক চাপ, মাদকাসক্ত ও ইন্টারনেটে আসক্তই মূলত কারণ। এতে উদ্বিগ্ন জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও মানসিক রোগিদের সংখ্যা বাড়ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৮ সালর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে হাসপাতালের বহির্বিভাগের মানসিক বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার ১২৪ জন রোগিকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর প্রায় ২৫ লাখ মানুষসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে আসা রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন ৪ জন। এর মাঝে ৩ জন রয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও ১ রয়েছেন মেডিকেল অফিসার। প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬০ থেকে ৯০ জন রোগী। আর প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ রোগিদের পাঠানো হয় পাবনা মানসিক হাসপাতালে। আর বাকি রোগিদের ফলোআপে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জনসংখ্যার মোট ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে যারা মানসিক বিষন্নতায় ভুগছেন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা কাজ করে। নগরায়ণ, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগত ও সামাজিক কারণে মানসিক রোগির সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এদিকে মানসিক রোগিদের প্রতি সমাজের ভুল ধারণা ও তাদের প্রতি খারাপ আচার আচরণ দূর করতে সকলকে উদ্যোগি হয়ে জনসচেতনতা বাড়ালে মানসিক রোগিদের সুস্থ করা যাবে এবং সংখ্যা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণত ১৪ থেকে ৫০ বছর বয়সিদেরকে বিভিন্ন সমস্যায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। এদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আসেন তরুণরা। তাদের বেশিরভাগই সামাজিক, পারিবারিক ও মাদকাসক্তি সমস্যায় ভুগে। তবে তাদেরকে পরিবার ও সামাজিকভাবে সহযোগিতা করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী ওষুধ খেলে সুস্থ করা সম্ভব করা হয়।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে যেসব মানসিক রোগি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন তাদের বেশিরভাগের মধ্যে রয়েছে বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা, বিরক্তিবোধ, অস্থিরতা, হঠাৎ রেগে যাওয়ার প্রবণতা, অতিচঞ্চলতা, অমনোযোগিতা, আহারব্যাধি, মনোব্যাধি, আত্মহত্যা ও নিজের ক্ষতি, মাদকাসক্তি, অবাধ যৌনাচার ও ভায়োলেন্সের প্রস্তুতি।
এছাড়া বিষণ্নতা, ডিমনেশিয়া, মুডিডিজোভাসহ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত সকল রোগিদের প্রতি সকলের সুন্দর ব্যবহার ও সামাজিকভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। বেশিরভাগ রোগির ক্ষেত্রে সাথে দেখা যায়, পরিবার ও সমাজ থেকে তাদের প্রতি খারাপ আচার আচরণ করা হয়ে থাকে।
এ সময় রোগির সাথে খারাপ আচার আচরণ করা থেকে বিরতি থাকতে হবে। তাদের পাশে থেকে সুন্দর ব্যবহারের দ্বারা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। রোগির সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। তাদের সর্বক্ষণ নজরে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুয়ায়ী চলতে হবে’।
বিশেষজ্ঞ আরো জানান, বর্তমানে জেলাভিত্তিক মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, রোগিকে সর্বশেষ পর্যায়ে আমাদের কাছে আনা হয়। তাদের প্রথম প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা করালে তাড়াতাড়ি সুস্থ করা সম্ভব হয়।
মাদকাসক্ত রোগিদের বিষয়ে তিনি বলেন, মাদকের ভয়াবহতা ছোট থেকেই বাচ্চাদের মাঝে তুলে ধরতে হবে। এজন্য বাচ্চাদের পাঠ্য বইয়ে ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরলে পত্র-পত্রিকা টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ক্ষতির বিষয়ে তুলে ধরলে সকলের মাঝে সচেতনতা বাড়বে। এর ফলে অনেকটাই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়