শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
ট্রেন ছাড়ার একটু আগেও স্টেশনে টিকিট খুঁজে বেড়ান অনেক যাত্রী। অথচ বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে দেখা গেল উল্টো চিত্র। হাতে হাতে টিকিট নিয়ে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন অনেক মানুষ, কেনার মানুষ নেই। চাহিদা না থাকায় মাত্র ৫০ টাকাতেও রাজশাহী-ঢাকার ট্রেনের টিকিট বিক্রি করেছেন অনেকে।
যাঁরা টিকিট বিক্রি করছিলেন, তাঁদের নিজেদেরই বৃহস্পতিবার রাত ১১টার ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার বিকালে ঢাকায় বসার কথা ছিল ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগের পরীক্ষায়। হঠাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরীক্ষা স্থগিত করে দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। তাই হুড়মুড় করে সবাই স্টেশনে আসেন টিকিট ফেরত দিতে, কিন্তু তখন আর টিকিট ফেরত নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম জানান, ৪৮ ঘণ্টা আগে যাত্রা বাতিল করলে সার্ভিস চার্জ বাবদ এসি শ্রেণির জন্য টিকিটের ৪০ টাকা, প্রথম শ্রেণি ৩০ টাকা এবং অন্যান্য শ্রেণির জন্য ২৫ টাকা কেটে নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ৪৮ ঘণ্টার কম, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়ের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ; ২৪ ঘণ্টার কম, ১২ ঘণ্টার বেশি সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ এবং ১২ ঘণ্টার কম, ৬ ঘণ্টার বেশি সময়ের আগে ৭৫ শতাংশ টাকাই কাটা হয়। ট্রেন ছাড়ার ৬ ঘণ্টার আগে যাত্রা বাতিল করলে কোন টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। তাই ধূমকেতুর টিকিট ফেরত নেওয়া যায়নি।
চাকরির পরীক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষা স্থগিতের খবর শোনেন তখন ট্রেনযাত্রায় সময় ছিল ৬ ঘণ্টারও কম। তাই কাউন্টারে ধূমকেতুর টিকিট ফেরত নেওয়া হচ্ছিল না। তবে কারও কারও শুক্রবার সকালের ‘সিল্কসিটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট ছিল। এ ছাড়া কারও কারও পরীক্ষা দিয়ে ফেরার জন্য শুক্রবার রাতের ঢাকা-রাজশাহীর ‘পদ্মা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। নির্ধারিত মাশুল কেটে সেগুলো ফেরত নেওয়া হয়েছে।
রাত ১০টার দিকে স্টেশনে টিকিট বেচতে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাগমারার গঙ্গানারায়নপুর গ্রামের লিটন মন্ডল। তিনি জানান, সন্ধ্যা ৭টা থেকে তিনি স্টেশনে। অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ পরীক্ষার্থী এসেছিলেন টিকিট ফেরত দিতে। কাউন্টারে ফেরত না নেওয়ায় কেউ কেউ বাইরে ৫০ টাকাতেও টিকিট বিক্রি করেছেন।
ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের এসি টিকিটের মূল্য ৬৫৬ টাকা। আর সাধারণ শোভন চেয়ার শ্রেণির মূল্য ৩৪০ টাকা। দুই শ্রেণির টিকিটই বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। সাগর চন্দ্র মণ্ডল নামের একজন বললেন, ‘একজন আমার টিকিটের দাম বললেন ৫০ টাকা। আমি বললাম, টাকা দিতে হবে না, এমনি নিয়ে যান। তখন লজ্জা পেয়ে আর ওই ব্যক্তি টিকিট নিলেন না।’ পাশে থেকে রঞ্জু আহমেদ বললেন, ‘সবাই সুযোগ নেয়। আজ আমরা বিপদে পড়েছি বলে টিকিটের দাম দেওয়া হচ্ছে না। অন্য সময় ট্রেন ছাড়ার আগে এই টিকিটই দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়।’
সুমাইয়া আক্তার ও তাঁর রুমমেট শিউলি আক্তারেরও পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় রাত ৮টায় যান টিকিট ফেরত দিতে। তাঁদের ঢাকা থেকে ফেরার টিকিট ফেরত নেওয়া হয়। কিন্তু যাওয়ার টিকিট ফেরত নেওয়া হয়নি। রাত ১১টা পর্যন্ত দুজনে স্টেশনে দাঁড়িয়েই ছিলেন টিকিট হাতে। এই অপেক্ষায় সুমাইয়া-শিউলির লাভ হলো। ট্রেন ছাড়ার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে মিলন রায় ও রঞ্জু সাইফুল ইসলাম নামের দুই বন্ধু তাঁদের টিকিট দুটি আসল দামেই কিনলেন।
মিলন জানালেন, তাঁদের বাড়ি লালমনিরহাট। তাঁরা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। এখন রাজশাহী থেকে ঢাকা যাবেন মৎস্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে। চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে কাউকে ঠকাতে চান না। তাই প্রকৃত দামেই তাঁরা টিকিট দুটি কিনলেন।
তবে মিলন-সাইফুলের মত ভাল মনের মানুষের দেখা পাননি যাত্রা বাতিল করা পরীক্ষার্থী তুহিন আলম। ৫০ টাকার বেশি কেউ তাঁর টিকিটের দামই বলেননি। রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে ছেড়ে গেল ধূমকেতু এক্সপ্রেস। তুহিন আলমও স্টেশনেই তাঁর টিকিটটি ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেললেন। তারপর বাড়ির পথে পা বাড়ালেন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়