শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১
বিভাগের আটটি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় বার্নের ক্ষত নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে রোগি। উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগিদের একটি বড় অংশের ভরসাস্থল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট। তবে সেখানেও খুব একটা স্বস্তির বার্তা নেই।
করোনার শুরু থেকে বার্নের সুবিধা সম্পন্ন ইউনিটটি ব্যবহার হচ্ছে করোনা ইউনিট হিসেবে। এতে সাধারণ ওয়ার্ডে বার্নের চিকিৎসায় নানা সংকট আর সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগিদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহী মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে আগে ৫২ শতাংশ বার্ন নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগিরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ৩০ শতাংশ বার্ন থাকলেই চিকিৎসকদের ভাবতে হচ্ছে। ঢাকায় রেফার্ড করে দেয়া হচ্ছে। আর্থিক সংকটে যারা ঢাকায় যেতে পারছে না তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়েই মারা যাচ্ছে। গত বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ৩০ শতাংশের কিছু বেশি বার্ন নিয়ে। যাদের আইসিইউসহ পর্যন্ত সেবা দেয়া গেলে ৪ থেকে ৫ জনকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারী, পুরুষ ও শিশু এই তিনটি ভাগে ২৪ শয্যা নিয়ে ২০১৪ সালে এই হাসপাতালে বার্ন ইউনিট চালু হয়। এরপর সেটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। যেখানে অস্ত্রোপচার কক্ষ ও ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার (ড্রেসিং) কক্ষ নিয়ে বার্ন ইউনিটটি চালু হয়। কিন্ত করোনার শুরু থেকে ১৪ বেডের একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে বার্ন ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে নারী, পুরুষ ও শিশুদের একসঙ্গে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হচেছ রোগিসহ সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সুবিধা, অস্ত্রপচার কক্ষ ও ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার (ড্রেসিং) কক্ষও নেই। নেই পর্যাপ্ত উপকরণের সরবরাহও। অথচ বেডের দ্বিগুনেরও বেশি রোগি চিকিৎসা নিচ্ছে। বেড না পেয়ে মেঝেতেই থাকছে রোগি। এতে রোগির ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়াসহ নতুন করে নানান জটিলতাও দেখা দিচ্ছে। গভীর ক্ষত নিয়ে সাধারণ এই ওয়ার্ডে কাতরাচ্ছেন অনেকেই।
নওগাঁ কালিগঞ্জ সরিয়াগ্রাম থেকে মেয়ে নূরাইয়া’র বার্নের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন মো. নূর ইসলাম। তিনি বলেন, ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় মেয়েকে এই ইউনিটে ভর্তি করেছেন। সে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মায়ের সঙ্গে ভাত রান্নায় সহযোগিতা করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যায় সে। পিঠের বেশকিছু জায়গা পুড়ে গেছে। দুই দিন মেঝেতে থাকার পর বেড পেয়েছেন। আর শীতের মধ্যে ডেসিঙের উপর কম্বল নিয়ে শুয়ে থাকতে মেয়ের কষ্ট আরও বেড়েছে।
নওগাঁ মহাদেবপুর থেকে গত বুধবার এই ওয়ার্ডে ভর্তি হন মো. আল মামুন (৫০)। তিনি জানান, ডায়াবেটিক্সের কারণে তার পায়ের গভীর ক্ষত হয়। পায়ের পচন রোধে একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। বাড়ি থেকে যাওয়া আসা করতে সমস্যা। কয়েকদিন ধরে মেঝেতেই পড়ে আছেন। বেড ফাঁকা না হলে তো আর বেড দিবে না।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান আফরোজা নাজনিন আশা বলেন, বার্ন ইউনিটটি বর্তমানে করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে রোগিদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বর্তমানে ওয়ার্ডে বেড সংখ্যাও কম। একারণে যেসব রোগিদের এখানে রেখে ড্রেসিং করতে হতো তাদের অনেককেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এবং কিছুদিন পরপর আসতে বলা হচ্ছে।
এখানে রেখে ড্রেসিং করতে না পারায় অনেক রোগির অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রোগিরা কষ্ট পাচ্ছে। বেড না থাকায় বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। আবার দূরের রোগি ইশ^রদী থেকে এসেছে, কুষ্টিয়া থেকে এসেছে এরা তো দু-দিন পরপর আমার সাথে দেখা করতে পারবে না। তাদেরকে বাধ্য হয়ে রাখতে হচ্ছে। বেড না পেলে মেঝেতেই রাখতে হচ্ছে। এসব রোগিরাও কষ্ট পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে বার্নের রোগিদের জন্য আইসিইউ সুবিধা নেই। এতে কিছু রোগি থাকে যাকে ধরে নেয়া হয় যে সে মারা যাবে। কিন্তু রোগির মৃত্যুর পূর্ববর্তী বা শেষ সময়ের যে সার্ভিস সেটা এখানে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকায় রেফার্ড করা হচ্ছে। যারা যেতে পারছে না। তারা এই সার্ভিসটা না পেয়েই মৃত্যুবরণ করছে। এছাড়া যারা ঢাকায় যাচ্ছে তাদের অনেকের অবস্থা এতোটায় খারাপ থাকে যে সেখানে পৌঁছানোর আগেই রোগি মারা যাচ্ছে।
এছাড়া উপকরণের কারণে অপারেশনের সংখ্যাও কমিয়ে দিতে হয়েছে। এ সময় করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় বার্ন ইউনিটকে বার্নের রোগিদের জন্য দ্রুতই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান আফরোজা নাজনিন আশা।
এবিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, এই বিষয়টি তাদের নজরে আছে। তবে করোনার কারণে বার্ন ইউনিট করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিলো। এখন করোনার রোগি অনেক কমে গেছে। তবে সামনে ওমিক্রনের শঙ্কা রয়েছে। তবে জানুয়ারির ১ তারিখ পর্যন্ত দেখবো। তারপর বার্ন ইউনিট বার্নের রোগিদের জন্য ব্যবহার করা হবে। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়