শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৫ ১৪৩১
|| ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২১
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে চলছে ইট তৈরির বিশাল যজ্ঞ। আব্দুস সোবহান মোল্লা নামের এক ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছেন এই ইটভাটা। এখনো উৎপাদিত ‘এএসএম’ নামের ইট পরিমাপে ছোট তৈরি করা হচ্ছে। ফলে এসব ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। একই অবস্থা উপজেলার অধিকাংশ ভাটার ইটের পরিমাপের।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে ১৫০টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে কিছু ইটভাটায় এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বাগমারা উপজেলায় ছোটবড় মিলে ৬৪ টি ইটভাটা রয়েছে।
কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে ভাটা মালিকরা মানহীন ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি করছেন। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ ভাটা মালিকদের কারসাজিতে অতিরিক্ত দামে ইট কিনে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতিটি ইটের পরিমাপ হবে দৈর্ঘ ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৫ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৩ ইঞ্চি। অথচ ভাটা মালিকরা ওই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের ইচ্ছেমত ইট তৈরি করছেন। কয়েকটি ভাটার ইট মাপ করে দেখা গেছে, দৈঘ্য ১০ এর পরিবর্তে সাড়ে ৯ ইঞ্চি, প্রস্ত ৫ এর পরিবর্তে সাড়ে ৪ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৩ এর পরিবর্তে পৌনে ৩ ইঞ্চি করে মাপ পাওয়া গেছে। এসব ইট বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি সাত থেকে সাড়ে সাত টাকা পর্যন্ত।
উপজেলার রামরামা গ্রামের ইট ক্রেতা আলাল উদ্দিন খরাদি জানান, সম্প্রতি এএসএম ভাটা থেকে তিনি ছয় হাজার এক নম্বর ইট কিনেছেন। এক হাজার ইট সাত হাজার ২০০ টাকা দরে তিনি কিনেছেন। কিন্তু ইট বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখা যায় পরিমাপে হাফ ইঞ্চি করে কম। এই ইট কিনে তিনি প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান।
এএসএম ভাটার ইট তৈরির এক কারিগর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাটা মালিক যে ফর্মা দিচ্ছেন আমরা সে ভাবেই ইট তৈরি করে আসছি। প্রতিটি ইটের ফর্মার দু’দিকে আকারে হাফ ইঞ্চি ছোট করা আছে। এর ফলে এক হাজার ইট তৈরির মাটিতে ৬০ পিস অতিরিক্ত ইট তৈরি হয়।
এএসএম ইটভাটা দেখাশোনা করেন আব্দুস সোবহান মোল্লার ছেলে মকবুল হোসেন। পরিমাপে ছোট ইট তৈরির বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। উল্টো গালিগালাজ করে তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন। ইট পরিমাপে ছোট তৈরির বিষয়টি অস্বীকার করেন বাগমারা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, বর্তমানে ইটের বাজারও প্রতিযোগিতা আছে। কেউ যদি ইট ছোট তৈরি করে তবে তার ইট গ্রাহকরা কেন কিনবে? মাপ দেখেই গ্রাহকরা ইট কেনে বলে জানান তিনি।
এদিকে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলাতে ১৪টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এসব ভাটাতেও ইট তৈরিতে সরকারি নিয়ম অনুসারে করা হচ্ছে না।
পুঠিয়া উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন বলেন, বিগত দিনে দু-একটি ভাটার ইট সাইজে ছোট তৈরি হতো। গত দুই বছর থেকে সকল ভাটা মালিক পরিমাপে কম করে একই মাপের ইট তৈরি করছেন।
পুঠিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দীন মন্ডল বলেন, আমরা ইট কাঁচা অবস্থায় সঠিক মাপে তৈরি করি। পোড়ানোর পর সাইজ কী হলো সেটা দেখার বিষয় নয়। ক্রেতারা পছন্দ হলে নিবেন, না হলে নয়। আমরা ক্রেতাদের জোর করে দিচ্ছি না।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, ভাটাগুলো ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আর এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ইট তৈরিতে পরিমাপ কম দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। যারা এই কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে অচিরেই মাঠে নামা হবে।
কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, রাজশাহীতে নি¤œমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি হচ্ছে। এ সব ইট কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়না।
রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, মানসম্পন্ন মাটি দিয়ে সঠিক পরিমাপে ইট তৈরির জন্য সকল ভাটা মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া আছে। নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরি দ-নীয় অপরাধ। এ নিয়ে তাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়