শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৩
ছোট্ট দোকানটির ভেতরে গিজগিজ করছে মানুষ। গরম-গরম জিলাপি তোলার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ। কয়েকজন পাচ্ছেন, অন্যরা অপেক্ষা করছেন। জিলাপি না নিয়েই এই ভিড় থেকে বেরিয়ে এলেন মেরাজুল ইসলাম। সঙ্গে থাকা লোকটিকে তিনি বললেন, ‘বাটার মোড়ের জিলাপি আর খাওয়া লাগবে না! দাঁড়িয়ে আছে ১০০ জন, জিলাপিই তো দিতে পারছে না।’
রাজশাহী শহরের বাটার মোড়ের এ দোকানের কোনো নাম নেই। নেই কোনো সাইনবোর্ডও। তবে দোকানটি বাটার মোড়ে বলে এ দোকানের জিলাপির নাম হয়ে গেছে ‘বাটার মোড়ের জিলাপি’। ষাট বছরের বেশি সময় ধরে একই স্বাদের জিলাপি তৈরি হয়ে চলেছে এখানে। রসে টইটম্বুর আর মচমচে জিলাপির টানে সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে দোকানটিতে। রমজানে ইফতারের জন্য এই ভিড় বাড়ে কয়েক গুণ।
এবার প্রথম রোজা থেকেই দোকানটিতে উপচে পড়া ভিড়। বিকেলে ভিড়ের কারণে তো জিলাপি না কিনেই ফিরলেন শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা মেরাজুল ইসলাম। কত দিন ধরে এখানকার জিলাপি খান, এমন প্রশ্নে বললেন, ‘বয়স আমার ৪৮। ছোটবেলায় যখন খেতে শিখেছি, তখন থেকেই খাচ্ছি। এখন এই জিলাপি ছাড়া তো ইফতার ভাবাই যায় না। কিন্তু আজ ভিড়ের কারণে কিনতে পারলাম না। কাল দুপুরে নামাজের পরপরই চলে আসব।’
শোয়েব উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ষাটের দশকে রাজশাহী শহরের রানীবাজারে এই জিলাপির দোকান দেন। তিনি দোকানের নাম দিয়েছিলেন ‘রানীবাজার রেস্টুরেন্ট’। কিছুদিন পর এই সাইনবোর্ড নষ্ট হয়ে গেলে তা আর লাগানো হয়নি। এখন সবাই ‘বাটার মোড়ের জিলাপির দোকান’ নামেই চেনে দোকানটিকে।
প্রথমে দোকানের কারিগর ছিলেন যামিনী সাহা, পরে তাঁর কাছ থেকে জিলাপি তৈরি শেখেন ছেলে কালিপদ সাহা। ১৯৮০ সালে বাবার মৃত্যুর পর দোকানের প্রধান কারিগর হন তিনি। কালিপদ মারা যান ২০১৭ সালে। এখন তাঁর রেখে যাওয়া দুই শিষ্য সাফাত আলী ও শফিকুল ইসলাম জিলাপি বানাচ্ছেন।
এখন দোকানের মালিকানায় শোয়েব উদ্দিনের ছেলেরা। তাঁদের মধ্যে মো. শামীম দেখাশোনা করেন এটি। বিকেল করে শামীমের ছেলে ও ভাতিজাদের জিলাপি বিক্রি করতে দেখা যায়। দোকানের ভেতরে-বাইরে তখন ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। দোকানের সামনে জিলাপি ভাজছিলেন সাফাত আর শফিকুল। ভাজার পরে জিলাপি রসে ডোবাচ্ছিলেন অন্য দুজন। আরও পাঁচজন কর্মচারী জিলাপির ময়দা প্রস্তুতের কাজ করে যাচ্ছিলেন।
কারিগর শফিকুল বললেন, ‘১৯৭৫ সালে ৩০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেছি। এখন ১৫ হাজার পাই। সাধারণ সময় দিনে পাঁচ মণ জিলাপি বিক্রি হয়, এই রোজায় বিক্রি হবে ১০ মণ করে। সকাল ৯টায় কাজ শুরু করেছি। ইফতারের আগপর্যন্ত তা চলবে। বিশ্রামের একটুও সুযোগ নেই।’
কারিগর সাফাত আলী বলেন, ‘কয়েক ধরনের ময়দা আর ভালো তেল দিয়ে জিলাপি ভাজি। বছরের পর বছর একই কৌশল, একই স্বাদ। এ জন্যই শহরজুড়ে এই জিলাপির এত নামডাক। আমাদের মহাজনের একটাই কথা—লাভ কম হোক, কিন্তু মান যেন ভালো হয়। নামটা যেন থাকে।’
বর্তমানে দোকানটির দায়িত্বে থাকা মো. শামীম জানালেন, গত বছর রোজার সময়েও ১৪০ টাকা কেজি দরে জিলাপি বিক্রি হয়েছে। এবার সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে কিছুদিন আগে তাঁরাও জিলাপির দাম বাড়িয়েছেন। এখন প্রতি কেজির দাম ১৮০ টাকা।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়