শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৫ ১৪৩১
|| ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৩
রাজশাহী অঞ্চলে চৈত্রের খরতাপ যেন ক্রমশ বাড়ছেই। এই অঞ্চলের প্রকৃতি ইতোমধ্যে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। আগুন ঝরা আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেখা দিয়েছে। একটু শীতল পরশের জন্য ব্যকুল হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। যতদিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা যেন ততই বাড়ছে। গতকাল সোমবার বিকালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনে মৃদু হাওয়া, রাতে ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে প্রাণিকুলে। বৃষ্টির জন্য যেন হাহাকার পড়ে গেছে। সূর্য দহনে শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তীব্র রোদে পুড়ছে বরেন্দ্রের মাটি। আর এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে আমের গুটি ঝরে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। এর প্রভাবে এক সপ্তাহ থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা বাড়ছেই। আর বৃষ্টিরও দেখা নেই। গত রবিবার (৯ এপ্রিল) রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগের দিন শনিবার রাজশাহী সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পর থেকে তাপমাত্রা বাড়ছেই। সর্বশেষ সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজশাহীর তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। তিনি জানান, রাজশাহী অঞ্চলে চলমান মৃদু তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
আব্দুস সালাম জানান, সোমবার ও রবিবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবার ছিল এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ২ এবং গত বৃহস্পতিবার ১৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি আরও জানান, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি ওপরে উঠলে বলা হয় মাঝারি। এছাড়া ৪০ ডিগ্রি বা তার ওপরে উঠলেই তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাই রাজশাহীতে এখন মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে।
বৃষ্টি না হলে এটি মাঝারিতেও রূপ নিতে পারে। তবে তাপপ্রবাহ বাড়লেও বাতাসের আদ্রতা কম আছে। এতে শরীরে ঘামের পরিমাণ কম হচ্ছে। তাই অস্বস্তি কিছুটা কম হচ্ছে। শনিবার বেলা ৩টায় রাজশাহীতে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ১৭ শতাংশ ছিল বলেও উল্লেখ করেন এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষক।
এদিকে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে রাজশাহীতে আমের গুটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় বৃষ্টি না হলে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে আমের গুটি ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আমচাষিসহ রাজশাহীর সব মানুষই এখন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। গেল বার আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীতে এ বছর প্রায় সব গাছেই প্রচুর মুকুল এসেছিল। মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টি হওয়ায় সেই মুকুল এরই মধ্য আমের গুটিতে পরিণত হয়েছে। এমন খরা অব্যাহত থাকলে আমের কিছু গুটি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সবাই। তবে তাপপ্রবাহ শুরুর আগে রাজশাহী অঞ্চলে দুই দফা বৃষ্টি সেই আশঙ্কা একটু কমেছে। যেটুকু ঝরবে সেটা স্বাভাবিক ধরে নিতে হবে। কৃষি বিভাগ থেকে আমচাষিদের গাছ ও গুটির পরিচর্যার পরামর্শ দিচ্ছেন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়