শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০২১
রাজশাহীতে থেকে প্রতিবছর ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার পান কেনাবেচা হয়। চাষিরা সরাসরি পান বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। স্থানীয় হাটে বেচাকেনায় সুবিধা এবং অন্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে পান চাষ।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৪ হাজার ৪৯৯ হেক্টর জমিতে (পানবরজ) ৭৬ হাজার ১৫১ মেট্রিকটন পানের উৎপাদন হয়েছে। সে হিসেবে এবার রাজশাহীতে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকার পান উৎপাদন তথা বেচাবিক্রি বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৪ হাজার ৩১১ হেক্টর জমিতে ৭২ হাজার ৩৩০ মেট্রিকটন পান উৎপাদন হয়েছিল।
মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, ‘রাজশাহীর স্থানীয় বাজারে পান বিক্রি হয় পোয়ার (৩২ বিড়ায় এক পোয়া) হিসেবে। তবে আমরা কেজিতে পানের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি বের করেছি।
আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি- একটি পানের গড় ওজন ৫ গ্রাম। আর এক পোয়া বা ৩২ বিড়া পানের ওজন ১০ কেজি। ১০ কেজি পানের দাম গড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সে হিসেবে ১ কেজি পানের দাম ২৫০ টাকা। আর ১০০০ কেজি বা ১ মেট্রিক টন পানের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।’
সহমত পোষণ করে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, চলতি বছরে ৭৬ হাজার ১৫১ মেট্রিকটন পানের উৎপাদন হয়েছে।
এক মেট্রিকটন পানের দাম যদি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে চলতি বছরে উৎপাদিত পানের দাম হয় ১৫৬১ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরে ৭২ হাজার ৭৬৪ জন কৃষক রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পান চাষ করে। বিভিন্ন ধরনের পানের মধ্যে রাজশাহীতে মিষ্টি পানের উৎপাদন বেশি।
এছাড়াও জেলার পুঠিয়া উপজেলায় এবার দুধস্বর ও সাচি পানের চাষ হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে পবা উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ জন কৃষক ২৩০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছেন। এতে ৩ হাজার ৪৫০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৫ মেট্রিকটন) পান উৎপাদন করেছে।
এছাড়া তানোর উপজেলায় ৬ জন কৃষক ০.৫৩ হেক্টর জমিতে ৬.৬২৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১২.৫ মেট্রিকটন), মোহনপুর উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৯০ জন কৃষক ১ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৯১২ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৬ মেট্রিকটন), বাগমারা উপজেলায় ২৩ হাজার কৃষক ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে ২৮ হাজার ৮০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৮ মেট্রিকটন), দুর্গাপুর উপজেলায় ২৭ হাজার ৮০০ কৃষক ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে ২৩ হাজার ৯৭০ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৭ মেট্রিকটন), পুঠিয়া উপজেলায় ২ হাজার ৩০০ কৃষক ১১৫ হেক্টর জমিতে দুধস্বর ও সাচি পানের চাষ করে ১ হাজার ৭২৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৫ মেট্রিকটন), গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩ জন কৃষক ০.২০ হেক্টর জমিতে ১.৭ মেট্রিকটন (গড় ফলন ৮.৫ মেট্রিকটন) এবং চারঘাট উপজেলায় ১৫ জন কৃষক ১.৫০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করে ৬.৫ মেট্রিকটন (গড় ফলন ১৩ মেট্রিকটন) পান উৎপাদন করেছে।
আজ সোমবার (২ আগস্ট) সরেজমিন জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি পান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে- বড়-ছোট আকৃতি অনুযায়ী প্রতি পোয়া (৩২ বিড়া) পানের দাম দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। যার মধ্যে ছোট পান বিক্রি হচ্ছে ১৫শো টাকা, মাঝারি ২৫শো টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা এবং মোটা বা বড় পান সাড়ে ৩ হাজার টাকা পোয়া দরে।
উপজেলার মৌগাছি গ্রামের পানচাষি আলী হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘মড়ক না লাগলে অন্য কৃষি ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। পানকে আমরা সোনার পাতার সঙ্গে তুলনা করি। ভাল পান হলে ১০ কাঠার বরজ থেকে বছরে পান বিক্রি করে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এবার আমি ৩০ কাঠা জমিতে পানবরজ করে সবমিলিয়ে ১৬ লাখ টাকা আয় করেছি।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘পান শুধু যে মানুষ খায় তা কিন্তু নয়। পানে রয়েছে ঔষধি গুণ। যার কারণে ওষুধ শিল্পেও পানের ব্যবহার ব্যাপক। এজন্যও পানের চাহিদা প্রচুর। অন্য ফসলের তুলনায় পান চাষে কৃষক অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতিবছর রাজশাহীতে পানের চাষ তথা পানবরজ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ২১৯৫.৩৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছিল। তার পরের বছর (২০১৭-১৮ অর্থবছর) ২৫৮৩.৩৪ হেক্টর জমিতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২৮৮০.৭২ হেক্টর জমিতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪৩১১ হেক্টর জমিতে এবং চলতি অর্থবছর তথা ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৪৪৯৯.২৩ হেক্টর জমির পানবরজে পান চাষ হয়েছে।’
উপ-পরিচালক বলেন, ‘পান চাষিদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে পান চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে এর উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর দেশের বাইরে রাজশাহীর পান রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য টেকসই উদ্যোগ নেয়া হলে রাজশাহীর পান হতে পারে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বিশাল খাত।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়