শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০২০
মসলা ফসলের মধ্যে হলুদ একটি জনপ্রিয় মসলা এবং দৈনন্দিন রান্নায় এর ব্যবহার সর্বজন বিদিত। মসলা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও হলুদ নানাবিধ প্রসাধনী সামগ্রী, ঔষধ শিল্পে, সুগন্ধি প্রস্তুতে এবং রং শিল্পে কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রাজশাহীতে বানিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে এবং এতে করে যেমন ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে তেমনি জাতীয় চাহিদা পুরণ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও অগ্রনি ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও হলুদ চাষ লাভজনক। এ কারণে খুলনার অনেক চাষী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ চাষ করে সফল হচ্ছেন। বিশেষত পতিত জমিতে হলুদ চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন অনেকে।
চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে হলুদের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উৎপাদিত হলুদের ফলন হয়েছে বেশ। মাঠে কৃষকরা হলুদ ওঠাতে ব্যস্ত এখন। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা কাঁচাহলুদ কিনে চাতালে সিদ্ধ করে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে শুরু করেছেন। এছাড়াও বাইরের জেলাগুলোয় হচ্ছে হলুদ সরবরাহ।
রাজশাহীতে বছরে ৭৯ কোটি টাকা টাকার হলুদের ব্যবসা হয়। হলুদ চাষের সাথে জড়িত আছে রাজশাহীর ১৫ হাজারের অধিক কৃষক। তবে ভারত থেকে হলুদ আমদানি করা হয় লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহীতে সব উপজেলায় হলুদ চাষ হলেও জেলার মধ্যে পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি হলুদ চাষ হয়। গতবছর রাজশাহী জেলায় এক হাজার ৮৩৯ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষাবাদ হয়েছিলো। সেখান থেকে শুকনা হলুদ পাওয়া গেছে ৬ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টন। এবছর দুই হাজার ৩৪ মেট্রিক টন জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে।আর দুই মাস পর কৃষকরা হলুদ তুলতে পারবেন।
গত ১০ বছরের চাষাবাদের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, গড়ে প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন শুকনা হলুদ উৎপাদন হয়েছে রাজশাহীতে। প্রতিকেজি শুকনা হলুদের দাম গড়ে ১২০ টাকা ধরা হলে এক মেট্রিক টন হলুদের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৬ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টন হলুদের দাম দাঁড়ায় ৭৮ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে বাজারে শুকনা হলুদ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়।
কৃষকরা জানান, হলুদের বীজ জমিতে বপনের পর পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগে হলুদ পরিপক্ক হতে। তখন বিঘাপ্রতি কাঁচা হলুদ হয় ৭০ থেকে ৮০ মণ। এরপর সেই কাঁচা হলুদ গরম পানিতে সেদ্ধ করে জমিতে শুকাতে হয়। ২০ থেকে ২৫ দিন শুকানোর পর শুকনো হলুদ পাওয়া যায়। যা বিক্রি করা হয়। শুকনা হলুদ জিপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে কাঁচা হলুদ বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। চার থেকে পাঁচ মণ কাঁচা হলুদ শুকানোর পর এক মণ শুকনা হলুদ পাওয়া যায়।
চারঘাট উপজেলার কালুহাটি গ্রামের কৃষক শাহাবুল হক জাহাঙ্গীর জানান, ১০ বছর আগে পাঁচ বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করতাম। এখন সেখানে দুই বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করছি। তাও আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করছি। বেশিরভাগ কৃষকরা এখনই সাথী ফসল হিসেবে হলুদ চাষ করেন। কেউ ১০ কাঠা জমিতে, কেউ ১৫ কাঠা জমিতে-এভাবে খন্ড খন্ড জমিতে হলুদ চাষ করেন। সাথী ফসল হিসেবে চাষাবাদ করায় হলুদের উৎপাদনও কমে গেছে। মোল্লা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক নূর
মোহাম্মদ মোল্লা জানান, তারা প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ হাজার মণ শুকনা হলুদ বিভিন্ন কৃষকদের কাছ থেকে কিনেন। বাছাই শেষে আকৃতিভেদে প্যাকেটজাত করে তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক জানান, আগের চেয়ে আবাদের পরিমাণ কমলেও হেক্টর প্রতি হলুদের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকরাও হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আগে যেখানে কৃষকরা হলুদ লাগিয়ে ফেলে রাখতেন, এখন সেখানে সার, সেচ ও কীটনাশক দেওয়ায় হলুদের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে হলুদ চাষে কৃষকদের সহযোগীতা করা হচ্ছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়