বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৪ ১৪৩১
|| ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২২
আম উৎপাদনের রাজ্যখ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে গতানুগতিক জাতগুলোর পাশাপাশি উন্নত জাতের আম আবাদে ঝুঁকছেন চাষীরা। প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন ব্যবস্থায় স্বল্প সময়ে ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়া যায় এমন জাতের নতুন নতুন আম বাগান গড়ে উঠছে।
বৃহদাকৃতির আম গাছ কেটে উন্নত জাতের আম বাগানও গড়ে উঠছে। এ অঞ্চলে উন্নত জাতের মধ্যে হাইব্রিড বারি আম-৪, গোরমতি ও ইলামতি-এ তিনটি জাত ভালো সাড়া ফেলেছে। তিনটি জাতেরই আম খেতে সুস্বাদু, কাঁচা-মিঠা ও পাকলে মিষ্টি।
দেশীয় জাতের আম আশ্বিনা ও আমেরিকার লাইন এম-৩৮৯৬ এর সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাত ‘বারি আম-৪’ এরইমধ্যে চাষীদের মাঝে ভালো সাড়া ফেলেছে। নওগাঁ জেলায় গত বছর ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। যেটা এই বছরে ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর বেড়ে ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। বর্ধিত জমির অধিকাংশতেই ‘বারি আম-৪’ চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এই জাতটির দিকে ঝুঁকছেন চাষীরা।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বারি আম-৪ উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড নাবী জাত। যেটি সংকরায়ণের মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে উদ্ভাবিত হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০০৩ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে চারা রোপনের জন্য মুক্তায়ান করা হয়। আমটির আকর্ষণীয় আকার-আকৃতি, স্বাদ, রং ও উৎপাদনের জন্য ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই জাতের আমের ৮০ শতাংশই খাদ্য উপযোগী। রোগবালাই কম, গাঢ় হলুদ ও আঁশহীন এই আমের প্রতিটির ওজন হয় ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ গ্রাম। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই আম গাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। এ ছাড়াও আম পাড়ার পর ৭ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
এদিকে মৌসুমের শেষদিকে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) আম হাইব্রিড ‘ইলামতি’। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হার্টিকালচার সেন্টারের বিজ্ঞানিরা গোমস্তাপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের একটি বাগনে এই আমের সন্ধান পান। মাঝারি আকৃতির এই আমের গড় ওজন ৪২৭ গ্রাম। কাঁচা আমটি সবুজ আর পাকা অবস্থায় হাল্কা হলুদ থাকে। পাকা আমে সুঘ্রাণ রয়েছে।
অপরদিকে বারি আম যেটা ‘গৌরমতি’ নামে অধিক পরিচিত। এই আম ইলামতি’র এবং পরে বাজারে আসে। সেই সময় অন্যজাতের আম বাজারে থাকে না বললেই চলে। এতে চাষীরা ভালো দাম পান। এই আমটির স্বাদ অনেকটাই ল্যাংড়া আমের মতো। কাঁচা-মিঠাও খাওয়া যায়। এই আমটিরও উৎপাদন ভালো। প্রতিটি আমের ওজন হয়ে থাকে প্রায় ৫০০ গ্রাম। গত বছর এই আম ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ৬ থেকে ৭ বছর বয়সী একটি গাছে এই আমের ফলন হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৩ টন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন জানান, হাইব্রিড বারি আম-৪, গোরমতি এই দুটি জাত তাদের কাছে আছে। এই দুটি জাত বাংলাদেশ ফল গবেষণা কেন্দ্রের আবিষ্কার। এই দুটি জাতই এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উৎপাদন, স্বাদ, রং সবদিক দিয়েই ভালো সাড়া ফেলেছে নতুন এই জাত। এই জাত দুটির রোগ-বালাইয়ের আক্রমণের হার অন্য আমগুলোর চেয়ে কম। চাষীরা দামও ভালো পাচ্ছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খয়ের উদ্দিন মোল্লা জানান, গৌরমতি আমটি মৌসুমের শেষে বাজারে আসছে। যে কারণে দামটা অন্য আমের চেয়ে বেশি পাচ্ছে চাষীরা। আর যেকোনও আম যখন সবার শেষে আসবে তখন পোকামাকড়ের আক্রমণের হারটা মৌসুমের তুলনায় বেড়ে যায়। তবে এখন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পোকাসহ রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা মাঠ পর্যায়ের চাষীরা খুব ভালো বোঝে। এটা নিয়ে কোনও শঙ্কা নাই। লাভজনক হওয়ায় নতুন জাতগুলোর প্রতি আম চাষীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়