শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২১
রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছিলেন মো. মাফিকুর আলম। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিয়ে বের হওয়ায় সময় মাথা ঘুরে পরে যান বৃদ্ধা জোহরা বেগম।
এ সময় বৃদ্ধাকে এ অবস্থায় দেখেতে পেয়ে ডিউটিরত পুলিশ সদস্য মাফিকুর আলম এগিয়ে আসেন। তিনি বৃদ্ধাকে কোলে তুলে নিয়ে অটোতে করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে এক প্রতিবন্ধী ভোট দিতে এলে তাকেও তিনি নিজ দায়িত্বে হুইল চেয়ার ঠেলে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে দেন। এই পুলিশ সদস্য যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সত্যি আজকাল যায় না।
এসব চিত্র চোখে পড়ে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ক্যামেরায়। এরপর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েন তিনি। এঘটনায় প্রশংসা কুড়াচ্ছেন নিজ ডিপার্টমেন্টসহ রাজশাহীবাসীর কাছে।
পুলিশ সদস্য মো. মাফিকুর আলম নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার কোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা। বাবার নাম মো. মাহবুব আলম। বাবা-মা ও তিন ভাই-বোন মিলিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোটে পাঁচজন। ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তিনি।
২০১৪ সালে কোলা বিজলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে পাশ করেন এসএসসি। ২০১৬ সালে কোলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ওই কলেজেই ইসলামের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন সম্মান বিভাগে।
২০১৭ সালে ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালে আবেদন করেন পুলিশে। পরীক্ষায় টিকেও যান তিনি। চাকরি হওয়ায় পরিবারের টানা পোড়েনের কথা ভেবে শিক্ষাজীবন অসমাপ্ত রেখেই যোগদান করেন পুলিশ বাহিনীতে।
মাফিকুর বর্তমানে আরএমপির পিওএম ডিভিশনে কর্মরত রয়েছেন। তিনি পুলিশে যোগদান করেছেন ২০১৭ সালের ৭ মে। তার পুলিশ ব্যাচ নং- ২৩২৬। নির্বাচনে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য দায়িত্ব পালনে এসেছিলেন পবার দামকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।
পুলিশ সদস্য মাফিকুরের এমন মানবিক ও মহৎকর্মে খুশি সবাই। অনেকেই তার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে ছড়িয়ে দেন। এতে প্রশংসায় ভাসতে থাকেন তিনি।
মানবিক পুলিশ মাফিকুরের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই মানুষের দু:খ-কষ্ট দেখলে মনে সহ্য হয় না। এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করতে ইচ্ছে করে। তাছাড়া পুলিশের চাকরিটাও মানুষকে সহযোগিতা করাই একটি চাকরি বলে জানান এই মানবিক পুলিশ।’
নিজ বেতনের টাকা থেকেও নিজের গ্রামের বাড়ির কিছু গরীব পরিবারকে সাহায্য করেন মাফিকুর। বিশেষ করে নওগার বদলগাছির কোলাপাড়ায় কিছু এতিম বাচ্চাদের তিনি সহযোগিতা করেন এবং তার এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান।
মানবিক এই পুলিশ সদস্য তার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার জন্য ডিপামেন্টে চিঠিও দিয়েছেন। তার স্বপ্ন অনার্স-মাস্টার্স শেষ করবেন এবং নিজ ডিপার্টমেন্টে আরও উচ্চ পর্যায়ে উদোন্নতির মাধ্যমে দেশ ও দশের সেবা করবেন। মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া নিয়ে সামনের দিকে এগুতে চান আরএমপির মানবিক পুলিশ সদস্য মাফিকুর আলম।
মানবিক পুলিশ সদস্য মাফিকুরের বিষয়ে কথা হয় আরএমপির পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ মানুষের সেবা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মাফিকুর যে মহৎ ও মানবিক কর্ম করেছে তা প্রশংসনীয়। একজন প্রকৃত পুলিশ সদস্যকে এমনই হওয়া উচিৎ। আশা করি মাফিকুরের মতো অন্যান্য পুলিশ সদস্যরাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং জনসাধারণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করবে।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়