বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
রাজশাহীর একটি দুর্গম অঞ্চল চর খানপুর। পদ্মা নদীর একটি চর এটি। ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা চরটিতে বসবাস করেন প্রায় দুই হাজার মানুষ। জীবন-জীবিকার জন্য এখানকার বাসিন্দাদের অনেকটাই রাজশাহী শহরের ওপর নির্ভর করতে হয়। যাতায়াতের ব্যবস্থা একমাত্র নদী পথ।
সীমান্ত সমস্যার কারণে নদী পথের এই যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় পিছিয়েপড়া চরবাসীদের। সহজ নদী পথের ৪০০ মিটারের মতো ভারতের সীমার মধ্যে পড়ায়, প্রায় ১৩ কিলোমিটার অতিরিক্ত নদী পথ ঘুরে রাজশাহী যেতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের।
অতিরিক্ত ১৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে শুধু সময় ও অতিরিক্ত অর্থই খরচ হয় না, পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। নৌকায় দীর্ঘ এই নদী পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সময় চরে আটকে যেতে হয়। এক্ষেত্রে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা বর্ণনা করা সম্ভব না। এমনকি চোখে না দেখলে বিশ্বাসও হবে না।
সীমাহীন এই দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে নদী পথে রাজশাহী যাতায়াতের জন্য ভারতের সীমার চার’শ মিটারের মতো ব্যবহার করার সুযোগ চান চরের বাসিন্দারা। এজন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা।
চরটি ঘুরে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও, নেই কোনো সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা। বিদ্যুৎও যায়নি সেখানে। তবে আছে সোলার বিদ্যুৎ। আর চিকিৎসা ও উচ্চশিক্ষার জন্য রাজশাহী শহরের ওপর নির্ভর করতে হয়।
চরের বাসিন্দাদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন কৃষি কাজ ও গরু-মহিষ পালন। এসব কৃষি পণ্য এবং গরু-মহিষ বিক্রি করতে নদী পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী শহরেই যেতে হয়। এক কথায় বিচ্ছিন্ন একটি চর হলেও এখানকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার একটি বড় অংশই রাজশাহী শহরের ওপর নির্ভরশীল।
১৯৪৭ সাল থেকে চরটিতে বসবাস করা রজত আলী বলেন, আমাদের এখানে সরকারি কোনো চিকিৎসক নেই। স্থানীয় কিছু হাতুড়ে ডাক্তার আছেন। বেশি সমস্যা হলে রাজশাহী যেতে হয়। এমনকি মহিলাদের সন্তান হওয়ার জন্য দীর্ঘ নদী পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী নিয়ে যেতে হয়। আমাদের বিকল্প আর কোনো পথ নেই।
তিনি বলেন, আগে আমরা সোজা নদী পথে রাজশাহী যেতে পারতাম। কিন্তু নদীর মধ্যে চর জেগে ওঠায় সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ওই পথে রাজশাহী যেতে ভারতের কিছু সীমা ব্যবহার করতে হয়। এ পথ দিয়ে রাজশাহী যেতে ৪০-৪৫ মিনিট লাগে। কিন্তু কিছু অংশ ভারতের মধ্যে পড়ায় এ পথ ব্যবহার করা যায় না। বিকল্প নদী পথে যেতে ২-৩ ঘণ্টা লাগে। সোজা পথটা ব্যবহার করতে পারলে আমাদের অনেক কষ্ট লাঘব হত।
জীবিকার বিষয়ে চরের এই বাসিন্দা বলেন, আমাদের জীবিকা কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। ধানসহ আমাদের জমিতে বিভিন্ন শাক-সবজি হয়। এছাড়া গরু ও মহিষ পালন করি। আমার ১৬টা মহিষ আছে। টাকার প্রয়োজন হলে রাজশাহী নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে আসি। এভাবেই চলে আমাদের জীবন।
৯০ বছরের চরের আর এক বাসিন্দা আবুল ছাত্তার বলেন, এ চরেই আমার জন্ম। এখনো এখানেই আছি। বিভিন্ন প্রয়োজনে নৌকায় করে রাজশাহী যেতে হয়। আগে ৪০-৪৫ মিনিটে নৌকায় করে রাজশাহী যাওয়া যেত। কিন্তু ওই নদী পথের মাঝে এখন নতুন চর হয়েছে। ফলে ওদিক দিয়ে আর যাওয়া যায় না। রাজশাহী যেতে এখন অনেক ঘুরে যেতে হয়। এতে দুই ঘণ্টার ওপরে সময় লাগে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই চিকিৎসার জন্য এই নদী পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী যেতে হয়। গর্ভবতী মহিলাদের কোনো সমস্যা হলে নৌকায় করে রাজশাহী নিয়ে যেতে হয়। এ সময় কি পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে বোঝানো যাবে না। অনেক সময় চরে নৌকা আটকে যায়।
‘তখন দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে বিকল্প আর একটি নদী পথ আছে। এ পথের অল্পকিছু অংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। এই পথ ব্যবহার করতে পারলে আমাদের কষ্ট অনেক কমে যেত। ৪০-৫০ মিনিটে রাজশাহী যেতে পারতাম।’
রইসউদ্দিন নামে চরের আর এক বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের রাজশাহী যেতে হয়। এজন্য ১৭ কিলোমিটারের মতো নদী পথ পাড়ি দিতে হয়। আর একটা পথ আছে, এটি চার-সাড়ে চার কিলোমিটারের মতো। তবে এ পথে ৪০০ মিটারের মতো ভারতের মধ্যে পড়েছে। ফলে এ পথটি ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারিভাবে এ পথটি ব্যবহারের সুযোগ করে দিলে আমাদের অনেক উপকার হবে।
যোগাযোগ করা হলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, চর খানপুরের বাসিন্দাদের রাজশাহী যাতায়াতের ক্ষেত্রে যে সমস্যা, তা সমাধানের জন্য আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবগত আছেন। সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়