বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২
শীতকালীন টমেটো চাষে এবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাষিরা ভালো লাভ পাচ্ছেন। মৌসুমের মাঝামাঝিতে এসেই তাদের খরচের টাকা উঠে গেছে। এখনও জমি থেকে টমেটো উঠছে। আরও মাসখানেক টমেটো উঠবে। এই সময়ের মধ্যে আরও লাভের আশা করছেন চাষিরা।
গোদাগাড়ীর সোনাদীঘি গ্রামের চাষি হাসিবুল ইসলাম এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষে খরচ করেছেন ১০ হাজার টাকা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে টমেটো উঠছে তার জমি থেকে। এরমধ্যেই হাসিবুলের হাতে এসেছে ৩০ হাজার টাকা। বাজার ভাল থাকলে আরও ২০ হাজার টাকার টমেটো বেচার আশা করছেন তিনি।
হাসিবুল বলেন, ‘গতবার টমেটো করে লাভ হয়েছিলো। এবারও ভাল লাভ হচ্ছে। অন্য ফসলের তুলনায় টমেটোতেই লাভ বেশি। হাতে কাঁচা পয়সা আসছে।’
হাসিবুলের মতো গোদাগাড়ীর আরও কয়েক হাজার চাষি এবারও শীতকালীন টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন। মৌসুম এখনও শেষ হয়নি, কিন্তু এরই মধ্যে খরচের টাকা উঠে গেছে চাষিদের।
কৃষি বিভাগের হিসাবে, প্রায় দুই দশক আগে গোদাগাড়ীতে শীতকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ শুরু হয়। বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে টমেটো ফলিয়ে প্রথম দিকে প্রতিবছরই চাষিরা লাভ করতেন। মাঝে কয়েকবছর নিম্নমানের বীজের কারণে চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। এখন আবার কয়েকবছর ধরে চাষিদের লাভ হচ্ছে। এবার শীত মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর প্রায় সবটাই চাষ হয়েছে গোদাগাড়ীতে। অল্প কিছু টমেটো চাষ হয়েছে পাশের পবা উপজেলায়।
এখানকার চাষিরা জমি থেকে পরিপক্ক টমেটো কাঁচা অবস্থায় তোলেন। তারপর এসব টমেটো রোদে দিয়ে স্প্রে করা হয় ইথিফন গ্রুপের রাসায়নিক। এতেই পেকে লাল হয়ে যায় টমেটো। প্রথম দিকে ইথিফন ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি এলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কৃষি বিভাগ নিশ্চিত হয়, নির্দিষ্ট পরিমাপে ইথিফন ব্যবহার মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। তাই বছরের পর বছর এভাবেই টমেটো লাল হচ্ছে গোদাগাড়ীতে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখানকার টমেটো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বসন্তপুর গ্রামের চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার টমেটোর দাম খুব ভাল আছে। এক সপ্তাহ পর পর জমি থেকে টমেটো তোলা যায়। নভেম্বরের শুরু থেকেই টমেটো উঠছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ফলন হবে। কৃষকের খরচের টাকা প্রথম দুই চালানেই উঠে গেছে। এখন যে রকম দাম পাওয়া যাচ্ছে, বাকি সময়টাও পাওয়া গেলে কৃষক লাভে লাল হয়ে যাবে।’
কৃষক লাভ করলেও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন শরীয়তপুর থেকে আসা বেপারী জুগার মাতব্বর। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে সোনাদীঘি এলাকায় পাকা টমেটো প্লাস্টিকের ক্যারেটে তুলছিলেন জুগারের শ্রমিকেরা। সেখানেই কথা হয় জুগারের সাথে। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে কৃষককে মণপ্রতি কাঁচা টমেটোর দাম দেওয়া হয়েছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। সেই টমেটো সাতদিন রেখে পাকিয়ে মোকামে নিয়ে বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দরে। এতে সব বেপারীর ক্ষতি হয়েছে।’
জুগার জানান, প্রতিবছরই যখন প্রথম টমেটো ওঠে, তখন দামটা একটু বেশি থাকে। এবারও বেশি দাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার বেপারীদের ক্ষতি হয়েছে ভারত থেকে টমেটো আমদানির কারণে। এখন আবার ভারত থেকে টমেটো আসা বন্ধ হয়েছে। তারপরেও বেপারীরা একটু সতর্ক হয়ে দাম দিচ্ছেন, যেন তারা শুরুর ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
গোদাগাড়ীতে এবার কয়েক ধরনের হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। বর্তমানে কৃষকেরা ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা টমেটো বিক্রি করতে পারছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ দরে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব টমেটো পাকিয়ে বেপরীদের কাছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছেন। কোন কোন ব্যবসায়ী নিজেই শ্রমিক নিয়ে কাঁচা টমেটো পাকাচ্ছেন।
কালিদীঘি এলাকায় দেড় বিঘা জমি টমেটো পাকানোর মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন রেজাউল করিম। পুরো মাঠটিই ভরে আছে কাঁচা-পাকা টমেটোতে। গরম করতে কিছু কিছু টমেটো স্প্রে করার পর স্তুপ করে রাখা হয়েছে খড় দিয়ে।
রেজাউল জানালেন, তার কাছে কৃষকেরা টমেটো বিক্রি করে যান। তিনি পাকিয়ে তা বিক্রি করেন বেপারীদের কাছে। কাঁচা টমেটো সাতদিন লাগছে পাকাতে। এক মণ টমেটো পাকানোর পর কেনা দামের চেয়ে ২০০ টাকা বেশিতে বিক্রি করতে পারলে ১০০ টাকা লাভ থাকছে। রেজাউল দাবি করেন, রাসায়নিক আর শ্রমিকের খরচ মিটিয়ে তাদের লাভ থাকছে কম। তবে চাষিরা ভাল লাভ করছেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোজদার হোসেনের মতেও এবার চাষিদের ভাল লাভ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গোদাগাড়ীর মাটি শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এ কারণে শীতকালে এখানে প্রচুর টমেটো হয়। কম-বেশি প্রতিবছরই চাষিরা লাভ করে থাকেন। তবে এবার শুরু থেকে ভাল দাম থাকার কারণে লাভও ভাল হচ্ছে।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়