মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১০ ১৪৩১
|| ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০১৯
কয়েক দিনের টানা গরমের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি হলেও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এডিস মশার প্রকোপ। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন এডিস মশার বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক এমন আবহাওয়া। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে এরই মধ্যে রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোলা হয়েছে ডেঙ্গুর বিশেষ ইউনিট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন-জুলাই মাস ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। আর জমে থাকা পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবজনিত কারণে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নগরবাসী সচেতন হয়ে নিজেদের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে ডেঙ্গু থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
মশা নিয়ে গবেষণা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। ডেঙ্গুর প্রকোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সচেতন হওয়াটা বেশি জরুরি।
এই গবেষক বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হয়েছে। এডিস মশার ডিম ছয়মাস পর্যন্ত শুকনো স্থানে থাকলেও বেঁচে থাকতে পারে। এবার আগে বৃষ্টির কারণে এবং থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে।
আবার ঢাকাসহ সারাদেশে পানির স্বল্পতার কারণে মানুষ বালতি কিংবা ড্রামে পানি জমিয়ে রাখে। আর বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ কাজের সাইটগুলোতে চৌবাচ্চা, ড্রাম এডিস মশার বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন তিনি।
অপরিকল্পিত নগরায়নের সঙ্গে এডিস মশার সুন্দর একটা সম্পর্ক আছে- মন্তব্য করে এই গবেষক বলেন, এরা ঘরের আশপাশে থাকতে পছন্দ করে। বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এরা ডিম ছাড়ে। এ বছর ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকবে তা গত ফেব্রুয়ারি মাসেই ইঙ্গিত দিয়েছিলাম।
তিনি আরো বলেন, ১৯৫৩ সালের পরে এ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেহেতু এই বছর ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ করেই বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে সেহেতু- এডিস মশার বংশ বিস্তারে এটি ভূমিকা রেখেছে। এডিস মশার ডিম ধানের বীজের মতো, শুকনা অবস্থায় ছয় মাস থাকলেও ডিম নষ্ট হয় না। যখনই আগের বছরের ডিম অর্থাৎ অক্টোবর মাসে যে ডিমটা এডিস মশা ছেড়েছে তার চারমাস পরে যখন ফেব্রুয়ারিতে পানি পেয়েছে তখন এডিস মশার গ্রুপ অব ইপিজটাই ঢাকা শহরে তৈরি হয়ে গেছে।
এরপর মার্চ-এপ্রিল মাসে যখন থেমে থেমে বৃষ্টি হলো তখন এডিস মশার বিস্তার বা সংখ্যাটা বাড়তে থাকল। অন্যদিকে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতি বছরই কমবেশি আছেই, এডিস মশার ঘনত্ব যখন অনেক মাত্রায় বেড়ে গেছে তখন এটা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে বলে বিভিন্নস্থানে পানি জমছে। সেখানে এডিস মশা ডিম দিচ্ছে। মশার বংশবৃদ্ধি বেশি হচ্ছে। যদি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে আগামী শীতকাল পর্যন্ত। কেননা শীতকালে এডিস মশা থাকে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি একটু বেশি ভয়াবহ থাকে। কারণ এই সময় রাজধানীতে এডিস মশার প্রকোপ বেশি থাকে। থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত মার্চ মাসে রাজধানীতে একটি জরিপ পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোড নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনার তত্ত্বাবধানে জরিপটি পরিচালিত হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে পরিচালিত এ জরিপে উঠে আসে নারিন্দা, মতিঝিল, গুলশানসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বিপজ্জনক মাত্রায়। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানে ১০ দিন ধরে এ জরিপকাজ পরিচালিত হয়।
এ সময় ৯৯৮টি বাড়ি পরিদর্শন ও নিরীক্ষণ করা হয়। এজন্য ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ১৯টি ওয়ার্ডে ১৪১টি ট্র্যাপ বসানো হয়।
জরিপে পাওয়া ফলাফলে দেখা যায়, এসব এলাকায় কিউলেক্স মশার আধিক্য অনেক বেশি। প্রতিটি ট্র্যাপে এডিস মশার গড় উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে দশমিক ৫৫ শতাংশ। কিউলেক্স মশা পাওয়া গেছে ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, মশার লার্ভার ঘনত্বের বিপজ্জনক সীমা ২০ বিআই। ঘনত্ব এর সমান বা বেশি হলে এডিস মশার উপদ্রব অনেক বেশি হবে। সে ক্ষেত্রে এ মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সূচক বিআই ২০ অথবা এর বেশি হলেই সেটা বিপজ্জনক।
জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রায় দ্বিগুণ। উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এডিস মশার লাভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব ৪০ বিআই। অন্যদিকে দক্ষিণে এডিস মশার লার্ভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব ৮০ বিআই। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে (নারিন্দা) এডিস মশার লাভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৮০ বিআই।
রাজধানীর দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, শরৎগুপ্ত রোড, বসু বাজার লেন, মুনির হোসেন লেন, শাহ্ সাহেব লেন, মেথরপট্টি, গুরুদাস সরকার লেন, করাতিটোলা লেন ও স্বামীবাগের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে ওয়ার্ডটি।
চলতি বছর গড় বৃষ্টিপাত কেমন জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, এখনো পুরো বছরের গড় বৃষ্টিপাত নির্নয় করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা প্রতি মাসের একটা গড় বৃষ্টিপাতের যে তালিকা তৈরি করি সে অনুযায়ী গত জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর জুলাই মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে আগস্ট মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত জনিত কারণে আগস্ট মাসে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, উত্তর অঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্প মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়