শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন একটি জাতির অভ্যুদয়ের স্ফূলিঙ্গ। স্ফূলিঙ্গ একটি কণার চেয়েও ক্ষুদ্র কিন্তু জ্বালিয়ে দিতে পারে সবকিছু। আবার সেই ধ্বংসের স্ফূলিঙ্গ হয়ে উঠতে পারে প্রেরণার উৎসমুখ। যার প্রত্যক্ষ উদাহরণ বাঙালির ভাষা-আন্দোলন, একদিন, মাত্র বিশ বছরের মাথায় পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ। যে দেশটির নাম বাংলাদেশ। আমরা বাঙালি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা এখন পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। ভাষাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মানচিত্রে মাত্র একটি জাতির অভ্যুদয় হয়েছে, সেই দেশটিও বাংলাদেশ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের বেদনাবিধুর অধ্যায় রচিত হলেও ভাষা আন্দোলনের শুর ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পরই। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম বৈঠকের কার্যবিধিতে ইংরেজি ও উর্দুভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি বাংলাভাষা ব্যবহার করার অধিকার সংক্রান্ত এক সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন পূর্ববাংলা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান কর্তৃক এ প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা ও পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন এবং তার সহযোগী মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ কর্তৃক লিয়াকত আলী খানকে জোর সমর্থন দেয়ায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।
১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জিন্নাহ মৃত্যুবরণ করলে খাজা নাজিমুদ্দীন পাকিস্তনের গভর্নর জেনারেল পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৫০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সংবিধান সংক্রান্ত যে রিপোর্টটি পেশ করেন তাতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ রিপোর্টে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং স্বায়ত্তশাসন দাবি করলে লিয়াকত আলী খানের প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়। পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের দ্বিতীয় মূলনীতি কমিটির রিপোর্ট পেশ করেন পাকিস্তানের পরবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন।
১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর লিয়াকত আলী খান নিহত হলে ১৯ অক্টোবর খাজা নাজিমুদ্দীন প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীনের ওই ঘোষণায় বিস্ময়ে, বেদনায় হতবাক হয়ে পড়ে পূর্ব বাংলার আপামর জনগণ। মাত্র চারদিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এক প্রতিবাদ ধর্মঘটের আয়োজন করে। এ ধর্মঘট স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের আহূত সাধারণ ধর্মঘট অভাবিত সাফল্য অর্জন করে। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি সারা প্রদেশে হরতালের ডাক দেয়া হয়। সরকার উত্তপ্ত জনমতের প্রবল ধারার কাছে অসহায় বোধ করে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে এক মাসের জন্য ঢাকা জেলার সর্বত্র হরতাল, সভা, মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে।
২১ ফেব্রুয়ারির সেই সকালে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে ঘিরে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে পরিষদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়ে ছাত্ররা সমবেত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, মেডিকেল কলেজ হোস্টেল গেটের সামনে ও বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে। বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রাদেশিক পরিষদের এ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগে থেকেই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন।
আমতলার সভা থেকে ১৪৪ ধারা ভাঙার ঘোষণা আসামাত্র একের পর এক দশজনের মিছিল বের হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে। শুরু হয় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের রক্তাক্ত সংঘর্ষ। একপর্যায়ে পুলিশ হঠাৎ করেই মেডিকেল হোস্টেল গেটের সামনে ও বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে জড়ো হওয়া ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ ও আবদুল জব্বার। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত আবদুস সালাম মারা যান ৭ এপ্রিল।
সেই থেকে একুশের দিনটি মহান শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। একের পর এক আন্দোলন চলতে থাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে। গণআন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালের শুরুতেই পাকিস্তানি সামরিক শাসক নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে গৃহীত সংবিধানের মাধ্যমে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়