শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||
আশ্বিন ১৪ ১৪৩০
|| ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২৩
কর্মসংস্থান। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা এটি। রাজশাহীতে এই সমস্যাটি প্রকট ছিলো। তবে সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। সমস্যা এখন অপার সম্ভাবনায় রূপান্তর হয়েছে। ভৌগলিক ও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় বৃহৎ কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠাই এই সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছিলো।
তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী দক্ষ জনবল তৈরি করে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকারের নেয়া হাইটেক পার্ক প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে রাজশাহীবাসী। তারুণ্যের এই নগরী এখন তরুণদের নিয়েই সম্ভাবনার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের তরুণদের বদলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্ক।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হাজারো শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত তরুণের প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে হাইটেক পার্ক। শিক্ষা নগরীকে কর্মবান্ধব নগরী করার প্রচেষ্টায় কালের দিশারী এই ‘হাইটেক পার্ক’। যার সুফল পাচ্ছে রাজশাহীবাসী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাই-টেক পার্ক রাজশাহীর ‘জয় সিলিকন টাওয়ার’ ও ‘শেখ কামাল ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’-এর মোট ২৩ টি আইটি প্রতিষ্ঠান বদলে দেয়ার রূপকার হিসেবে কাজ করছে। প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা রাজশাহী হাইটেক পার্ক প্রকল্প এরইমধ্যে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছে। প্রত্যক্ষভাবেই হাজারও তারুণ্যের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান পরপর দুইবারের পুনঃনির্বাচিত রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আবদারের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে একটি আইটি ভিলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিলেন। পিএম’র প্রতিশ্রুতিতেই ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ একনেকে সরকারি আদেশ হিসেবে জারি হয়। রাজশাহী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় একই বছরের ১৪ সেপ্টম্বর। এরপর পুরোদমে চলতে থাকে নির্মাণ কাজ।
নির্মাণ কাজ শেষে বর্তমানে শেখ কামাল ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারে গত কয়েক বছর ধরে ৮ কোম্পানির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৩ শতাধিক দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে। যারা নিজেরা অনলাইন মার্কেটে সফলতার সঙ্গে কাজ করে নিজেদের বেকারত্ব ঘুঁচিয়ে এখন দক্ষ জনবল তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া জয় সিলিকন টাওয়ারে ১৫ টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখানেও হাজারাও তরুণ কাজ করছে। প্রতিনিয়তই কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
রাজশাহী হাইটেক পার্কে স্পেস বরাদ্দ নিয়ে কাজ করে সবচেয়ে সফল ও আলোচিত হয়েছে ‘ফ্লিট বাংলাদেশ’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এই আইটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা রাজশাহীর খাইরুল আলম। এখন পর্যন্ত তিনি রাজশাহীর সফল আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
দেড় দশকের পরিশ্রমে এই খাতে শুধু নিজের শক্ত অবস্থানই তৈরি করেন নি তিনি, শত বেকারের কর্মস্থান করেছেন। স্বপ্ন দেখেন হাজার যুবকের কর্মসংস্থানের। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন এবং ইবের মতো প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি নিজস্ব সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সফটওয়্যার সেবাও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
খাইরুল আলম জানান, অদক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও কাজের দক্ষতা বিবেচনায় পরবর্তীতে তাদের স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে থাকে তার প্রতিষ্ঠান। মাত্র ১০ জন কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে তার ৩ শতাধিক কর্মী রয়েছে।
তিনি জানান, শুরুর এক সপ্তাহের মাথায় ক্লায়েন্ট যখন তাকে দুই হাজার ডলার পাঠায়, সেখান থেকেই সে এটিকে পেশা হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা করেন। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে হয় নি তাকে।
শুধু খাইরুল ইসলামই নয়; এখানকার উদ্যোক্তাদের গল্পগুলো প্রায় এমনি। তারই মতো আরেক উদ্যোক্তা অ্যারোডেক্স আইটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সুলতান মোহাম্মদ আনসারী। ইন্টার পাস করার পরপরই আইটি জগত সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন শুরু করেন তিনি। ২০১২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে গ্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর অনলাইন মার্কেটিঙের কাজ করেন। এরপর রাজশাহীতে ফিরে এসে ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে হাইটেক পার্কে স্পেস নিয়ে ট্রেনিং এর মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য জনবল তৈরির পাশাপাশি গুগলসহ আন্তর্জাতিক আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন।
তিনি জানান, আইটি জগতে কর্মসংস্থানে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন। রাজশাহীতে দক্ষ লোকের প্রচুর অভাব রয়েছে। একারণে তারা ট্রেনিং প্রোগ্রামও চালু করেন। এতে করে যেসব দক্ষ ছেলে-মেয়ে তৈরি হচ্ছে, তাদের কর্মসংস্থানও তারাই করতে পারছেন।
২০১৫ সালে অনলাইন মার্কেটে হাতেখড়ি হয়েছিলো আরেক উদ্যোক্তা ডিএম সলিউশনের ফাউন্ডার মো. সোহেল রানার। কলেজে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তিনি আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যান। বর্তমানে সফলতার সঙ্গেই হাইটেক পার্কে স্পেস বরাদ্দ দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে তার কর্মীরা।
সোহেল রানা জানান, তার বাড়ি মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি হরিপরপাড়া এলাকায়। ২০১৫ সালে অনলাইন মার্কেটিঙের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। কিন্তু সে সময় এলাকায় নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা ছিলো না। আর নানা প্রতিবন্ধকতাও ছিলো। সেগুলো পেরিয়েই এখন নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যেখানে স্থায়ীভাবে প্রায় ২০ জন দক্ষবল কাজ করছে। এছাড়া বিনামূল্যে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরিতেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক রাজশাহী প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল কবীর জানান, হাইটেক পার্ক আইটি উদ্যোক্তাদের প্রণোদিত করার পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে তারা কাজ করছেন। প্রতিনিয়তই নতুন নতুনে কোর্স নিয়ে আসা হচ্ছে। রাজশাহীতে হাইটেক পার্কের কার্যক্রমের খুবই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ট্রেনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে দক্ষ লোক তৈরিতে কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছেন।
রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কর্মসংস্থানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ৩১ একর জায়গায় শেখ কামাল আইটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। জয় সিলিকন টাওয়ারসহ সবগুলোতেই আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখানে শিক্ষা নগরী রাজশাহীর প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। হাইটেক পার্কটি দেশের অগ্রযাত্রাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়