শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১
|| ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২২
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় এ মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো বিধায় বাড়িতে বসেই কৃষকেরা ধান বিক্রি করছেন। তবে আমনের বাম্পার ফলন হলেও ঢলনপ্রথার কাছে জিম্মি থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন উপজেলার কৃষকেরা।
জানা গেছে, মেট্রিক টন পদ্ধতিতে ৪০ কেজিতে এক মণ হলেও চারঘাটের কৃষকদের কাছ থেকে ৪৪-৪৫ কেজি মণ হিসাব করে ধান কিনছেন দালালরা। আর স্থানীয় বাজারগুলোতে ফড়িয়াদের আধিপত্য ও সরকারি গুদামে ধানের দাম কম থাকায় জটিলতা এড়াতে বাধ্য হয়ে ফড়িয়াদের কাছেই বিক্রি করছেন কৃষক। এতে করে এখন ৪৪-৪৫ কেজিতে মণ হিসাব করার বিষয়টি স্থানীয় রীতিতে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকেরা প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চারঘাট উপজেলায় এবার ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ১ হাজার ২০০ হেক্টর বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকায় উচ্চফলনশীল জাতের ধান হেক্টরপ্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় জাতের তিন থেকে সাড়ে তিন মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, এবার আমনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারগুলোতে সরকারি গুদামের চেয়ে ধানের মূল্য বেশি। তবে ৪০ কেজিতে মণ হিসাব করলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৪৪-৪৫ কেজিতে মণ হিসাব করে ধান বিক্রি করায় প্রতি মণে কৃষকেরা ১২০-১৫০ টাকা দাম কম পাচ্ছেন।
একাধিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর ৪০ কেজি হিসাবে মণ নির্ধারণ করে বিক্রি চললেও এবার মৌসুমের শুরু থেকে ৪৪-৪৫ কেজিতে মণ হিসাব করে ধান কিনছেন দালাল ও ফড়িয়ারা। এতে আর্থিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘ধান মাড়াই করার পর চিটা ও কুটা আলাদা করে বস্তা ভরে বিক্রি করি। তার পরও ফড়িয়ারা মণপ্রতি ৪-৫ কেজি পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন। এটা অন্যায়, এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই। এত ধান বাজারে নিয়ে বিক্রি করাও সম্ভব নয়।’
উপজেলার শলুয়া গ্রামের কৃষক সবুর আলী বলেন, ‘এত কষ্ট করে আবাদ করে প্রতি মণে চার-পাঁচ কেজি ধান বেশি দিতে হচ্ছে। সরকারি গুদামে ধান বিক্রি আরও বেশি ঝামেলার। এ জন্য বাধ্য হয়েই ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করছি।’
বানেশ্বর বাজারের ধানের আড়তদার মন্টু আলী বলেন, ‘আমরা ৪০ কেজিতে মণ হিসাবেই ধান কিনে বিক্রি করি, উল্টো আমাদের আরও ঘাটতি দেখা দেয়। ফড়িয়ারা যে কৃষকদের কাছ থেকে ৪৫ কেজিতে ধান কেনেন, সে প্রথা বন্ধ করা হোক। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ করছি।’
রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, ‘আমরাও বিষয়টি জানতে পেরেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়